শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:০৩ রাত
আপডেট : ০৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির জেনে শুনে বিষ পান

মহিউদ্দিন খান মোহন : দেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংলাপ। গত ১ নভেম্বর সরকারের সাথে সংলাপ হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের, আর ২ নভেম্বর সংলাপ হয়েছে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। সংলাপ শেষে যুক্তফ্রন্ট আলোচনা সুন্দর হয়েছে এবং তারা খুশি বললেও ঐক্যফ্রন্ট তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সংলাপ থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন। যদিও গণভবনের গেটে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন আলোচনা ভালো হয়েছে বললেও পরে তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে কার্যত হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ থেকে বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখানেই শেষ নয়, ঐক্যফ্রন্ট চাইলে আবারো সংলাপে হতে পারে। সবশেষ খবর হলো, সরকার পক্ষের সাথে ছোট পরিসরে আলোচনার জন্য ঐক্যফ্রন্ট একটি টম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় আলোচনার দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি এবং কোনো পক্ষই তা করতে চান না। তাছাড়া অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে সরকারের সংলাপ চলবে।

এসব সংলাপ থেকে কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে কিনা কেউ বলতে পারছেন না। অনেকে অবশ্য এ সংলাপ প্রক্রিয়াকে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন বলে মনে করছেন। তাদের মন্তব্য হলো যেখানে আমাদের সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের পরষ্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সেখানে তারা এ টেবিলে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলছেন, খানাপিনা করছেন, এটা কম নয়। তবে, সংলাপের ফলাফল যা-ই হোক, একটি প্রশ্ন খুব গুরুত্বের সাথেই নানা মহলে উচ্চারিত হচ্ছে, তাহলো এ সংলাপ থেকে বিএনপি কী পেলো বা পাবে। যদিও সরকারের সংলাপ বিএনপির সাথে হয়নি, হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সাথে। কিন্তু এটাতো সত্যি যে, ঐক্যফ্রন্টের মূল শক্তি বিএনপি। কিন্তু দেখা গেলো, বিএনপির যে মূল দাবি, তাদের চেয়ারপার্সনের মুক্তি তা সংলাপের টেবিলে একরকম পাত্তাই পায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করে ‘ওটা আদালতের এখতিয়ারভুক্ত, সরকারের কিছুই করার নেই’ বলে একরকম ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, এসব দাবিও আলোচনায় তেমন গুরত্ব পায়নি। তাহলে সংলাপে কী পাওয়া গেল? সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না, রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে সরকার বিবেচনা করবে এসব মামুলি কিছু দাবি মেনে নেয়ার আভাস সরকারপক্ষ দিয়েছে। তাতে যে মূল সমস্যার কোনো সমাধান হবে না সেটা বলাই বাহুল্য। তাহলে কী হবে ভবিষ্যতে আর বিএনপিই বা কী করবে?

স্মরণ রাখতে হবে, বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে বিএনপি এখন আর একক কোনো শক্তি নয়। দলটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের খাঁচায় বন্দী হয়ে আছে। সংলাপ, আন্দোলন বা নির্বাচন কোনেটার ক্ষেত্রেই বিএনপির একক সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। জনসমর্থন বা নেতাকর্মীর সংখ্যার হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের ভেতরে ৯৫ ভাগই বিএনপির। তা সত্ত্বেও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণফোরামের প্রায় সমান অবস্থায় আছে দলটি। সংলাপে বিএনপি আর গণফোরামের প্রায় সমান সংখ্যক নেতা অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া সংলাপ টেবিলে ড. কামাল হেসেনের একপাশ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকলেও অন্য পাশে বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দূরে ঠেলে দিয়ে সুব্রত চৌধুরীকে কাছে বসানো দলটির নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে ।

এ মুহূর্তে বিএনপি বেশ বেকায়দায়ই আছে। কারণ তারা যদি আন্দোলন, সংলাপ বা নির্বাচন বিষয়ে নিজেদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে চায়, তাহলে এক্যফ্রন্টের ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে, এমন কি তা ভেঙ্গেও যেতে পারে। এখন বিএনপির যে মূল দাবি, বেগম জিয়ার মুক্তি, তা অপূর্ণ রেখেই যদি ঐক্যফ্রন্ট নামমাত্র কয়েকটি দাবি পূরণের শর্তে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কি করবে বিএনপি? হয় তাদের ফ্রন্ট ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে, আর নাহয় ‘বিষ খেয়ে বিষ হজম’ করার মতো নেত্রীকে জেলে রেখেই নির্বাচনে যেতে হবে।

এদিকে, কেউ কেউ ঐক্যফ্রন্টের একটি অংশের সাথে সরকারের গোপন সমঝোতারও সন্দেহ করছেন। তারা বলছেন যে, একটি সংলাপের জন্য বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে এলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। কিন্তু সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের একটি চিঠিতে সরকার ত্বরিত সাড়া দিল! কী এমন জাদু ছিল ড. কামালের চিঠিতে, যে সরকার সাথে সাথেই সংলাপে রাজী হয়ে গেল! সন্দিগ্ধ ব্যক্তিরা বলছেন যে, পরিস্থিতির কারণে বিএনপি তাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখেই নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবে। আর সে নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট হবে সংসদের বিরোধী দল, ড. কামাল হোসেন হবেন বিরোধী দলীয় নেতা, আ স ম আবদুর রব বিরোধী দলীয় উপ-নেতা আর মোস্তফা মোহসীন মন্টু হবেন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে বিএনপির বড় বড় নেতারা কোথায় থাকবেন? উত্তর হলো পরিকল্পিত ওই নির্বাচনে তারা পরাজিত হবেন। গোপন নির্বাচনী সমঝোতাটা সেভাবেই হবে। ঐক্যফ্রন্টের যে ফাঁদে বিএনপি পড়েছে তাতে এমনটি ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সেজন্যই বিজ্ঞজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপি কি জেনে শুনেই ঐক্যফ্রন্ট নামের বিষ পান করেছে? লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়