মো. ইউসুফ আলী বাচ্চু : সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়ে এই দেশের জন্ম দিয়েছেন। আমরা ‘তাদেরকে’ যুদ্ধ করে পরাজিত করেছি ঠিকই কিন্তু কবর দিতে পারিনি।
শুক্রবার বাংলাদেশ অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত 'সাম্প্রদায়িকতার সেকাল-একাল' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবার যুদ্ধের ইতিহাস আছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের কোন যুদ্ধের ইতিহাস নাই। জিয়াউর রহমান এদেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে এসেছে। তিনি ক্ষমতায় এসে সাম্প্রদায়িক শক্তির মূল রাজাকার, আলবদর ও আল সামস উজ্জীবিত করেছে। আমি এই সভায় দাবী করছি, প্রায় সব রাজাকারের বিচার হয়েছে কিন্তু জিয়াউর রহমানের বিচার হয়নি। তার মরণোত্তর বিচার করা উচিত, একই সঙ্গে জিয়াপন্থীদের বিচার করা উচিত। আর তাদের বিচার হলেই সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের উৎঘাটন হবে এবং সেটা রুখতে আমাদের জন্য সহজ হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, উদার ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করা হয়। এটা আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে আমরা আবার সেই পাকিস্তানে ফিরে যাই। সেই রাজনীতিকে আজও আমরা পরাজিত করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ধর্ম মানুষের পরিচয় হতে পারে না। দেশকে উদার ও অসাম্প্রদায়িক করার জন্য ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ধর্ম কখনো রাজনীতি চর্চার বিষয় হতে পারে না।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব বলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতির একটি অস্ত্র হিসেবে ধারণ করা হয়েছে। তাই একটি গোষ্ঠী ধারণা করছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে যদি হিন্দুবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া যায় তবে ভোটের বাক্সে জয়ী হওয়া যাবে। কিন্তু এটা ভাবা ভুল। তারা এখনো সাম্প্রদায়িকতার ষড়যন্ত্র বিস্তার করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি গণতান্ত্রিক রাখতে হয় তবে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ তা বন্ধ করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা মানুষ, তারা এখন আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি। কিন্তু আমার মনে হয় আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে হবে না। সর্তক থাকতে হবে। কারণ, যেকোন সময় তারা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ছোবল মারবে।
তারা ১৯৭৫-৯৬ পর্যন্ত দেশকে একটি পাকিস্তান ভাবাদর্শের দেশ হিসেবে পরিণত করেছিলো। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার মূল ভিত্তি ছিলো একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। ন'মাস যুদ্ধের পর আমরা সেই যুদ্ধে জয়লাভ করি। সংবিধান প্রণয়নের দিবসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন 'ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি হবে না'। এরপর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যারা করেছে, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ১৬ ডিসেম্বরের পর।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নকশা প্রণয়ন করেন জিয়াউর রহমান। এরপর তিনি দেশকে পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। এরপর রাজাকাররা আবার দেশে ফিরতে শুরু করে এবং রাজনীতি শুরু করে।
বোয়াফের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ের উপস্থাপনায় আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিন্নাত হুদা, লেখক ও সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :