বিভুরঞ্জন সরকার: ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রথম দফা আলোচনায় কি পাওয়া গেল তা নিয়ে এখন চলবে নানামুখী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। কেউ খুশি, কেউ বেজার। এমনই হওয়ার কথা। দেশের যে রাজনৈতিক বাস্তবতা তাতে সবাই কোনো কিছুতে খুশি হবে না। ঐক্যফ্রন্ট খুশি হলে আওয়ামী লীগ খুশি হবে না। আওয়ামী লীগ খুশি তো অন্যরা অখুশি।
তবে ১ নভেম্বরের আলোচনা অনেক কিছুর শুভ সূচনা করেছে। রুদ্ধদ্বার খুলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দুয়ার সব সময় খোলা থাকবে। মুখোমুখী বসে দুই পক্ষই পরস্পরের কথা বলেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কতোটুকু পাওয়া যাবে বা সরকার আসলে কতোটুকু ছাড় দেবে সে ধারণা নিশ্চয়ই উপস্থিত নেতৃবৃন্দ পেয়েছেন।
এরপর পানি ঘোলা করার জন্য অপতৎপরতা চালিয়ে সুবিধে হবে বলে মনে হয় না। সরকারের অবস্থান দুর্বল বলে মনে হয়নি। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রত্যয়ী এবং স্বতঃস্ফূর্ত। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাসহ অন্যদের শরীরী ভাষা কি কেউ পাঠ করতে পেরেছেন? তাদের কি দৃঢ়চেতা মনে হয়েছে?
ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক বিএনপির ভেতরের সমস্যাও কিছুটা বাইরে এসেছে গয়েশ্বর রায়ের অনুপস্থিতিতে। মির্জা ফখরুল সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এখন অসন্তোষ নিয়েই নির্বাচনে যাবেন কি?
'বিশেষ সমাধান' পায়নি ঐক্যফ্রন্ট। তাহলে? 'আন্দোলন চলবে'। আন্দোলনের ধরন কি হবে? প্রচারমূলক, নাকি সহিংস? মানুষ কি চাইছে? শান্তি, না সংঘাত অন্য দল এবং জোটের সঙ্গেও আলোচনা হবে। এই 'সবার সঙ্গে আলোচনা' কি বিএনপিকে একটু ব্যাকফুটে ঠেলে দিলো না?
শেখ হাসিনা যে 'সংবিধানসম্মত' পথের বাইরে যাবেন না এবং সংবিধানের নতুন নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে মস্তিষ্কে ঝড় তোলার মতো সময় যে এখন নেই - সেটা কি না বোঝার মতো জটিল কিছু? যারা রাতারাতি পরিবর্তন আশা করেন তারা বলেই খালাস। পরিবর্তন করতে গেলে যারা প্রকৃতই সেটা করতে চান তারা বোঝেন সূইয়ের ফুটোয় সুতা ঢোকানোটাও ততো সহজ নয়।
মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা তাতে পানি ঢেলে দিয়েছেন। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ শেখ হাসিনার হাতে। এটা হাত বদল করার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক সক্ষমতা এখন বিএনপি কেন সম্মিলিত বিরোধী দলেরও আছে বলে মনে হয় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তেজক বা রসালো প্রচারণা অনেককেই আমোদিত-আহ্লাদিত করতে পারে কিন্তু রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে রাজনীতির উপযুক্ত পাঠ গ্রহণের বিকল্প নেই।
আপনার মতামত লিখুন :