শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:২৯ সকাল
আপডেট : ০২ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও বধ্যভূমি

তপু হারুন, শেরপুরঃ অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও বধ্যভূমি।

১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর এই দিনে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালায় উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও সীমান্তে (বর্তমান স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট) এলাকায়।

অতর্কিতভাবে গণহত্যা চালিয়ে ঘন্টা খানিকের মধ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে অসংখ্য বাংলাদেশ ও ভারতের নিরীহ মানুষকে। স্বাধীনতার দীর্ঘপথ পরিক্রমায় এখানে স্মৃতিফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। অথচ বাংলাশের ওই বদ্ধ ভূমি সংলগ্ন ভারতীয় অংশে বিএসএফ ক্যাম্পে সেদেশের সরকার শহীদদের স্মরণে চমৎকার স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেছে।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও নাকুগাঁও বধ্যভূমিকে রক্ষার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাকবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে এসব শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে নাকুগাঁও বধ্যভূমি। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও সরকারিভাবে দিবসটি পালন করা হয় না।

ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণরা স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, এদিন পাক-হায়েনাদের হামলায় নিহত হওয়া ৯ জন বিএসএফের হিসেব জানা গেলেও বাংলাদেশিদের সঠিক পরিসংখ্যান আজও জানা যায়নি। তবে নিহত বাঙ্গালিদের মধ্যে ছিলেন, আব্দুল মোতালেব ও আশফাকুর রহমান। এ দু’জনের লাশ ভারতের বিএসএফ বাহিনী নাকুগাঁও সীমান্তের ভারত অংশের মসজিদ সংলগ্ন এক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বাকি বাঙ্গালীদের লাশ বাংলাদেশে সমাহিত ও ভারতীয়দের ভারতে দাহ করা হয়।
আব্দুল মোতালেব নব বধূকে ঘরে রেখে ‘জীবন থেকে নেওয়া’ ছবির প্রিন্ট সাথে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। এ ছবিটি ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অর্থ সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। তার লেখা ১টি চিঠি ও তার ছবি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ যাদু ঘরে সংরক্ষিত আছে। পারিবারিকভাবে তার স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছে ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহীদ আশফাকুর রহমানের পরিচয় অজ্ঞাত। মৃত্যুর পর তার পকেটে ১টি ছবি পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায় তিনি ঘরোয়া পরিবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজ উদ্দিন আহমেদকে খাবার পরিবেশন করছিলেন। এ ছবি দেখেই পাকবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

এছাড়াও শহীদদের মাঝে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন, নুর ইসলাম (ইপিআর), নুরুজ্জামান (পুলিশ), রিয়াজ সরকার, আশরাফ আলী, হযরত আলী, নরেন সাধু, নরেন শীল, নীপেন দে, ফনিন্দ্র দাস, অশ্বনী দাস, আব্বাস সরকার ও তার অষ্টাদশী মেয়ে এবং তার ৮ মাসের ছেলে।

ওই এলাকার প্রবীণরা জানান, তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বারেঙ্গা পাড়া, চান্দুভূই, ডালু বাজার, মাছংপানি, ছৈপানি ও ডিমাপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায়। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ। এ সকল শহীদদের অনেকেই ঘুমিয়ে আছে নাকুগাঁও বধ্যভূমিতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু তাদেরকে স্মরণ করা হয় না। এ নাকুগাঁও বধ্যভূমিতে কোন স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি।
অথচ সীমান্তের কুল ঘেষে ভারতীয়রা শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে। এ বধ্যভূমি সংরক্ষনে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অধিকাংশ বধ্যভূমিই এখন পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভোগাই নদী গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। যে অংশটুকু রয়েছে তাতেও কখনও ঝোপঝাড় আবার কখনও গরু ছাগল বিচরণ করতে দেখা যায়।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকার কোলঘেঁষে নোমেন্সল্যান্ড এলাকা হওয়ায় এখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা যাচ্ছেনা।
তবে এলাকাবাসী জানান, নোমেন্সল্যান্ড এলাকা হলেও এ বধ্যভূমির আশপাশে বাংলাদেশ অংশে অনেক বাড়ি-ঘর আর ভারতীয় অংশে বিএসএফ ক্যাম্প ও স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে ভারতীয়রা। এ দিকে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম বেলায়েত হোসেন খসরু ও ১৯৯২ সালের ২৭ জুন জেলা প্রশাসক এখানে স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। অজ্ঞাত কারনে সে কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী সরজমিনে এই গণকবরের করুন হাল দেখে দ্রুত একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের মৌখিক নির্দেশ দিলেও এ যাবতকালেও কোন কাজ হয়নি। অথচ ভারত অংশের বধ্যভূমিকে নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে সিমেন্ট ও কংক্রিটের পাইলিং করে তীরক্ষাবাঁধ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। শুধু অবহেলায় পড়ে আছে আমাদের গৌরবের স্মৃতি।

এই বধ্যভূমির পাশ্ববর্তী বাড়ির প্রত্যক্ষ্যদর্শী শ্রী রাজকুমার (৫৮) বলেন, আমি দেখেছি এখানে পাকহানাদার শত্রুরা অনেক মানুষ হত্যা করার পর এখানে তাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে।

নাকুগাঁও গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আমির ফকির জানান, সে দিনের ভয়াল স্মৃতির কথা, এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করছে, আমিও দৃড়চিত্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালের ২৫মে হঠাৎ নাকুগাঁও এ পাকবাহিনীরা আক্রমন করে অগনিত ভারতের মিত্রবাহিনী ও বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। মনের পরে নাইল্লা (পাট) জাগের মতো হেই দিন মানুষকে গণকবর দেওয়া অইছিল। কিন্তু এখানে আইজও কোন প্রকার স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা অয় নাই।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ওইস্থানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা প্রয়োজন। তবে ওই জায়গাটি নোমেন্সল্যান্ড হওয়ায় আইনী কোন জটিলতা আছে কি না তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়