ফয়সাল মেহেদী: নানা অনিয়মে ধুঁকছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত। লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে এ খাতের খেলাপিঋণের পরিমাণ। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে খাতটি। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতের ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১টিই সমস্যাগ্রস্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রেড জোনে বা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রথম প্রান্তিকে রেড জোনে ছিল ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট ৩০ জুন-২০১৮-তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি সহনশীল সক্ষমতা (স্ট্রেস টেস্টিং) মূল্যায়ন করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ৩০ জুনের শেষে অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে সমস্যাগ্রস্ত ৩১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি ইয়েলো জোনে (অপেক্ষকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ) অবস্থান করছে। আগের প্রান্তিকে ১৭টি প্রতিষ্ঠান ইয়েলো জোনে ছিল। আলোচিত সময়ে গ্রিন জোন বা নিরাপদ স্থানে রয়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর আগের প্রান্তিকে নিরাপদ স্থানে ছিল ৫টি প্রতিষ্ঠান। বাকী ১৩টি রয়েছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।
আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড কমে যাওয়া, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়া, প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে না পারা, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং শেয়ারবাজারে দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণেই এনবিএফআই খাতে দুর্বলতা বেড়েছে। তবে গ্রিন জোনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা ও আর্থিক সক্ষমতা দুটোই বাড়ছে।
জানা গেছে, ঋণ ও সুদের হার, তহবিল ব্যয় এবং তারল্য -এই চারটি ঝুঁকি পর্যালোচনা করে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জোন নির্বাচন করা হয়। ঝুঁকি সহনশীলের সক্ষমতার ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন ভাগে চিহ্নিত করা হয়। যারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে তাদের রেড জোনে রাখা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে। তবে গ্রাহকের স্বার্থে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝুঁকি কাটিয়ে উঠার জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট খেলাপিঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ মার্চ শেষে খেলাপিঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ৬ মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
তথ্যমতে, ৩০ জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ ও লিজ হিসেবে মোট ৬৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপির হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৬২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা বিতরণ হয়, যার মধ্যে খেলাপির হার ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
আপনার মতামত লিখুন :