মোহাম্মদ রুবেল: গত কয়েক বছরে তুলনায় চলতি বছরে দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর ও মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও, ঝুঁকিতে রয়ে গেছে দেশের ১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ। ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩ টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। এই জেলাগুলোতে প্রতি বছর ম্যালেরিয়া রোগে অসুস্থতা সহ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৯৮ ভাগ সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে। এ বাস্তবতায় জনগণ সচেতন না হলে প্রাণঘাটি ম্যালেরিয়া রোগ আরো মারাত্মক আকারে ধারণ করতে পারে জানা যায়।
ব্রাকের ম্যালেরিয়া বিভাগ হতে জানা যায়, ১৩ টি জেলার মধ্যে ২০১৮ বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৮৪৫৬ ও মৃত্যুর সংখ্যা ৬ জন। ২০১৭ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯২৪৭ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ জন। ২০১৬ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭৭৬৭ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ জন। ২০১৫ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯৭১৯ ও মৃত্যুর সংখ্যা ৯ জন। ২০১৪ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭৪৮০ ও মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫ জন। ২০১৩ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬৮৯১ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ জন। ২০১২ এ রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯৫১৮ ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১ জন।
ম্যালেরিয়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তা ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আওতাধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ও কমিউনিকেবল ডিজিডেস কন্ট্রোল বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা আমাদের নতুন সময়কে বলেন, ম্যালেরিয়া রোগ নির্মূলরে ক্ষেত্রে জলবায়ুর পরিবতন একটি বড় সংকট। কারণ এ পরিবর্তনরে সাথে জড়িত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের ম্যালেরিয়া বিভাগের পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সার থেকে বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকাগুলোতেও ম্যালেরিয়ার প্রার্দুভাব বেশি। জলবায়ু ও পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশার সংখ্যাবৃদ্ধি এর একটা কারণ। বাংলাদেশে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলাগুলো সহ ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ার রোগের প্রার্দুভাব রয়েছে।
তিনি বলছেন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজারের কিছু অংশে পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব এলাকায় ম্যালেরিয়া মশা নির্মুলে নিয়ে ১৬টি এনজিও কাজ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চলাচল ও যোগাযোগের মাধ্যম জলপথ হওয়ায় ম্যালেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐসব অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসা সেবা পৌছে দিতে অন্তত ৩টি নৌ অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন।
ড.আকরামুল জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ামুক্ত হবে বাংলাদেশ। তাই কাজের গতি বাড়াতে হবে, না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। এ লক্ষ্যে অর্জনেই এখন থেকে সরকার ও আমরা কাজ করে যাচ্ছি কি ভাবে ম্যালেরিয়া নির্মূণ করা যায়।
ম্যারেরিয়া নির্মূলে কি ধরণের কাজ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া অর্ন্তভূক্ত এলাকার প্রতিটি ম্যালেরিয়া রোগীর তদন্ত করা, প্রাইভেট সেক্টর থেকেও রিপোর্ট সংগ্রহ করে চিকিৎসা দেওয়া। রোগীর চারপাশের ৬০টি বাড়িতে ম্যালেরিয়া রোগীর অনুসন্ধান করা, হট স্পট এলাকাগুলোতে সবার জন্য প্রয়োজনীয় মশারি বিতরণ। সারা বছর ধরেই বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মশারি মজুদ করা ইত্যাদি।
সম্পদনায়: শাহীন চৌধুরী, হুমায়ুন কবির খোকন
আপনার মতামত লিখুন :