কালের কন্ঠ : একটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পরদিনই আগের আরেকটি মামলায় কারাদণ্ড দ্বিগুণ বৃদ্ধি এবং এর পরদিনই আবার বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসির প্রতি আদালতের নির্দেশ আসায় দলটির মধ্যে সংশয়-সন্দেহ বেড়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছে, তাদের দলকে চাপে ফেলার জন্য পরপর সংঘটিত তিনটি ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। অনেকের মতে, এসবের মূল কারণ বিএনপির প্রতি উসকানি, যাতে দলটি ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, সরকার নানাভাবে চাপ ও উসকানি দিচ্ছে। পরপর সংঘটিত অনেক ঘটনাই এর প্রমাণ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এর পরও আমরা ধৈর্য ধরে আছি। সংলাপে অংশ নেব, পরিস্থিতি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের নেতৃত্ব কে দেবেন তা বিএনপি ও দলের নেতাকর্মীরা ঠিক করে। দলের জাতীয় কাউন্সিল আছে। সেই কাউন্সিলই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ম্যান্ডেট দিয়েছে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার।
একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার জন্য গতকাল হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ইসি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করলে বিএনপির আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলের নেতৃত্বে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উঠবে। কারণ বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারার ‘ঘ’তে বলা ছিল, ‘সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি’ বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এ ধারাটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে সামনে রেখে ওই সময় কিছুটা তড়িঘড়ি করে বিএনপি সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসিতে জমা দেয়। কারণ বিএনপির কাছে তথ্য ছিল, রায়ের পর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করতে পারে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর সরকারি দলের নেতারাও এ প্রশ্নে বক্তৃতা-বিবৃতিতে নানা কথা বলেন, যদিও ইসি ওই সময় এ প্রশ্নে নীরবতা পালন করে।
অবশ্য এখন বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা উচ্চ আদালতের ওপর নির্ভর করছে। তবে ইসির এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব হচ্ছে, সংশোধিত গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা। খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হলে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। আর গত ২৮ জানুয়ারি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসিতে জমা দেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ দলটির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল, যেখানে গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে দেওয়া হয়। কিন্তু এত দিনেও ওই গঠনতন্ত্র ইসি গ্রহণ করেনি। গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দেয়।
গত সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নতুন করে খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এর পরদিন মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাঁর সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন আদালত।
দুটি মামলার একটিতে নতুন করে সাজা এবং অন্যটিতে সাজা বাড়ানোর ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ ঘটনাকে সরকারের কূটকৌশল বলে বিবেচনা করেন।
গতকাল বুধবার হাইকোর্ট এক নির্দেশে ইসিকে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে এবং এ বিষয়ে আবেদনকারীর আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ব্যাংকক থেকে টেলিফোনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আরপিও অনুযায়ী আমরা ইসিতে গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছি। এটা অনুমোদন না করার কিছু নেই। কারণ এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’ তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র বিএনপি তৈরি করবে। দলের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। অন্য কারো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তাঁর মতে, নেতৃত্বের প্রশ্নেও বাধা বা শর্ত শুধু বিএনপির গঠনতন্ত্রেই ছিল। দেশের অন্য কোনো দলের গঠনতন্ত্রে নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় আছে; বিএনপি তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। চাইলে সরকার অনেক কিছুই করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :