সমকাল : ভারতের সাবেক বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা ও প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের ভাস্কর্য ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৮২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এটিই এখন বিশ্বের সর্বাোচ্চ ভাস্কর্য, যা স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রায় দ্বিগুন।
ভারতের ‘লৌহ মানব’খ্যাত সরদার প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীতে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হলো। এটি উদ্বোধনের পর মোদি বলেন, এই দিনটার জন্য আমি অপেক্ষা করে ছিলাম। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আজ। এই দিনটা ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গুজরাটের কেওড়িয়াতে নর্মদা নদীর উপর ভাস্কর্যটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৯৯০ কোটি রুপি। এজন্য ২০ হাজার বর্গমিটার এলাকা সজ্জিত করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির নকশা তৈরি করেছেন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত স্থপতি রাম ভি সূতর। ভাস্কর্য নির্মাণের সব ব্যয় গুজরাট রাজ্য সরকার বহন করলেও শেষের দিকে এ প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার ও সাধারণ মানুষের সহায়তা নেওয়া হয়।
এটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন স্টিল, ২২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট, ১৮ হাজার ৫০০ টন স্টিল রড এবং ১৮.৫ লাখ কেজি ব্রোঞ্জ ক্ল্যাডিং। ভাস্কর্যের ১৫৩ মিটার উচ্চতায় রয়েছে গ্যালারি, যেখানে ২০০ জন একসঙ্গে যেতে পারবেন।
সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় ব্যারিস্টার ও কূটনীতিক ছিলেন। ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রী সভায় তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হন।
প্যাটেলের ভাস্কর্য নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, ঐক্যের নামে এতো খরচ করে এতো উঁচু ভাস্কর্য কেন? ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে পাশ কাটিয়ে সর্দার প্যাটেলের ভাস্কর্যের নির্মাণের পেছনের মোদি উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ভাস্কর্যটি নিয়ে গুজরাটেও তীব্র সমালোচনা চলছে। এই রাজ্যের কৃষকরা সম্প্রতি বড় রকমের পানির সংকটে ভুগছেন। তহবিল নেই এই যুক্তিতে সেচের ব্যবস্থা করছে না রাজ্য সরকার। সেই মুহূর্তে বিপুল অর্থ ব্যয়ে তৈরি এ ভাস্কর্য নির্মাণ সরকারের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সাড়ে চার বছর ধরে মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্লোগান তুললেও প্যাটেলের ভাস্কর্যের বড় অংশ বানিয়ে আনতে হয়েছে চীন থেকে। ক’দিন আগেও কয়েকশ’ চীনা কর্মী গুজরাটে এই ভাস্কর্য নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এটা নিয়েও চলছে সমালোচনা। অনেকে বলছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নয়, ভাস্কর্যটি ‘মেড ইন চায়না’!
যেখানে ভাস্কর্যটি তৈরি হয়েছে, সেই এলাকায় আদিবাসীদের বাস। পরিবেশ ও তাদের বাসস্থানের প্রশ্ন তুলে সর্দার প্যাটেলের এ ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন গুজরাটের অনেকেই। হয়েছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদও। উদ্বোধনের দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে গোটা এলাকা নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়।
এর আগে উচ্চতার দিক থেকে সর্বোচ্চ ভাস্কর্য ছিল চীনের ‘স্প্রিং টেম্পল অব বুদ্ধ’। এটির উচ্চতা ১৫৩ মিটার। বর্তমানে সেই অবস্থান নিল এই ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপানের ১২০ মিটার উঁচু ‘উশিকু দায়বাসু’, চতুর্থ স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৩ মিটার উঁচু ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’।
আপনার মতামত লিখুন :