আশিক রহমান : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার নিঃশর্ত সংলাপে বসতে রাজি হয়েছে। ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে হবে এই সংলাপ। সরকারের এই উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সংলাপ দরকার। দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দল বসে একটা সুন্দর সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করুক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হঠাৎ এই সংলাপ উদ্যোগ স্বস্তির। সুন্দর। সম্ভাবনার বার্তা। সুযোগ। সকলের এখন দায়িত্ব সঠিকভাবে তা কাজে লাগানো।
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সমাজে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আমরা উৎকণ্ঠিত থাকবো এই সুবাতাস কতদিন বহমান থাকবে। সরকার বলছিলো, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। কারণ বিএনপির অতীত কর্মকা-ের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনায় কোনো লাভ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হঠাৎই হাওয়া বদলে গেলো। এটা রাজনৈতিক ময়দানে সুবাতাস। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ড. কামাল হোসেন একাধিকবার বঙ্গবন্ধুর নাম লিখেছেন। এটা তো ঠিক, সবকিছুর পরও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। এতে কী বঙ্গবন্ধুর ক্ষতি হয়েছিলো। হয়নি। আওয়ামী লীগ সংলাপ আহ্বান করেনি, করেছে ঐক্যফ্রন্ট। হোক আলোচনা, সংলাপের মধ্যদিয়ে সংকেটর সমাধান হোক। সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে নয়।
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সংলাপ সফলতা এমনিতে আসবে না। সহজও হবে না। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। তাই সংলাপ সফল করতে হলে সব পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও রাখতে হবে। আন্তরিক ও সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কথা বললে ইতিবাচক কিছু বের হয়ে আসতে পারে।
শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, সংলাপ ভালো। সংলাপ সুন্দর। সংলাপ মঙ্গল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া খুব দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে সহায়ক হয়। জনকল্যাণের জায়গাটা অনেক অগ্রগতি হবে। রাষ্ট্রপরিচালনায় অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা আসবে। তিনি বলেন, সংলাপের ইতিবাচক ফল হবে কিনা আগে থেকে বলা মুশকিল। সংলাপ শুরু হলেই বোঝা যাবে কী ফল হতে যাচ্ছে। তবে সংলাপের বিষয়টি তো এখন বোঝা যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। এই ৭ দফা আলোচনার ভিত্তি হবে। এর বাইরেও অতিরিক্ত অনেক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় তো ক্ষতি নেই। কিছু হারানোরও নেই। আলোচনা সফল করতে হলে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে সবার। সরকারের ওপরই নির্ভর করবে ঐক্যফ্রন্ট কিছু ছাড় দেবে কিনা।
৭ দফা দাবি ঐক্যফ্রন্টের, চাইলে ছাড় তারা দিতে পারে। এটা তাদের বিষয়। তবে সংলাপে বসলে অনেককিছুই সামনে চলে আসবে। মুখোমুখি কথা বললে ভালো কোনো সমাধান চলে আসলে সবার জন্যই মঙ্গল।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেইÑ এটাই তো প্রমাণিত হলো। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কদিন বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এখন শর্তহীন সংলাপ হচ্ছে। রাজনীতি বোঝা বড় মুশকিল। সংলাপ বসবে। আলোচনা শুরু হলেই বোঝা যাবে এই সংলাপের কোনো আউটাম আছে কিনা। কারণ দেশে এ পর্যন্ত যত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে তার কোনোটারই আউটকাম আসেনি। বরং পরিস্থিতি জটিল হতে দেখেছি আমরা।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে ‘না’-এর মধ্যেও একটা সংলাপ হতে যাচ্ছে। যখন এ ধরনের একটা সংলাপ হয় তখন রাজনৈতিক মাঠে একটা স্বস্তি আসে। দুই পক্ষ যেহেতু মুখোমুখি হচ্ছে আলোচনা হবে। আলোচনা হলে কিছুটা অগ্রগতি হয়তো হবে। না হলেও নেই। কিন্তু এই সংলাপে বসার কারণে বড় রকমের সংঘাতের আশঙ্কা কমে যায়। বড় কোনো সংঘর্ষ হবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এরকম একটা সময়ে সরকারি দল নিঃশর্তভাবে সংলাপে বসার কথা বলছে। এটা একটা ইউন ইউন সিচুয়েশন। যদিও তখন তারা বলেছিলো, কোনোদিনও সংলাপ হবে না বিএনপির সঙ্গে। তবুও তাদের জন্য এটা ইউন ইউন সিচুয়েশন। সরকার বা আওয়ামী লীগ এখন বলবে, যাদের সঙ্গে বসবো না বলেছিলাম, তাদের সঙ্গে তো বসিনি। সংলাপ করছি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। আবার ঐক্যফ্রন্ট বলবে, এতদিন যারা সংলাপে রাজি ছিলো না তাদেরকে আমরা সংলাপে আনতে পেরেছি। মোটকথা, জিতেছি মনোভাব দুই পক্ষের মধ্যেই আছে। এটা ভালো।
আপনার মতামত লিখুন :