রমজান আলী : শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পাওনা ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। জানা গেছে, ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কৃষি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের শীর্ষ গ্রাহকদের ৮০ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি।
কৃষি ব্যাংকের খেলাপিদের শীর্ষে রয়েছেন ফেয়ার ইয়ার্ন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম আহমেদ। ঋণখেলাপি এ গ্রাহকের কাছে ব্যাংকটির পাওনার পরিমাণ ৩১৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্য বড় খেলাপিদের মধ্যে রয়েছে পদ্মা বিলিছিং এন্ড ডাইনিং লিমিটেড তাদের কাছে ১৪৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা, এসএ গ্রুপের কাছে প্রায় ৮৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, আনিকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলীর কাছে ১০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, হোসাইন এন্টারপ্রাইজ লিমিডেট কাছে ৭৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এছাড়া গাড়ি ব্যবসায়ী মো. ওয়াহিদুর রহমানের ফিয়াজ গ্রুপের ফিয়াজ এন্টারপ্রাহজের কাছে ৫১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ফিয়াজ ট্রডিংয়ের ৩২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, আরএন সুয়েটার লিমিটেড কাছে ২৭ কোটি, হিমালয় আইস এন্ড কোল্ড স্টোর লিঃ কাছে ২১ কোটি ৯৩ লাখ, রোসিবার্গ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ কাছে ২১ কোটি ৭৫ লাখ, মা বাণিজ্য বিতান (মা ইনপুট এন্ড সাইফ্লাইয়ার লি কাছে ১৮ কোটি ২১ লাখ, কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কাছে ২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে কৃষি ব্যাংকের। এছাড়া রহমান ট্রেডিংয়ের কাছে ৬২ কোটি ৭২ লাখ, মনো ব্যাগ লিমিটেডের কাছে ৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, আব্বাস ট্রেডিংয়ের কাছে ৩১ কোটি, মনো ফিড মিলস লিমিটেডের কাছে ৩৩ কোটি, মনো প্যাকেজিং ইন্ডাষ্ট্রি লিমিডেট কাছে ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ এবং এনএ করপোরেশনের কাছে ২৬ কোটি টাকা বহুদিন আগেই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
বড় অংকের এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। ব্যাংকটির তথ্যমতে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খেলাপি ঋণের হার ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল। যা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কৃষি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ দশমিক নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকটির মূলধন ছিল ২২ হাজার ৩৭২ কোটি ৫২ লাখ যা গত অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৫৯ কোটি ২১ লাখ। ব্যাংকটির ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট খেলাপি ছিল ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে কৃষি ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বড় গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় কঠিন। আদালতে মামলা চালিয়ে বড় খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা নেই। এজন্য সবচেয়ে শীর্ষ খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে অর্থ আদায়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে হবে। সার্বিক উন্নতির বিষয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, লোকসান কমিয়ে আনা, খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সূচকে উন্নতির মাধ্যমে গত অর্থবছরে ঘুরে দাড়িয়েছে ব্যাংকটি। বর্তমানে যে ঋণ খেলাপি রয়েছে তা অর্থবছরে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা চেষ্টা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :