শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০১৮, ০৯:৩১ সকাল
আপডেট : ৩০ অক্টোবর, ২০১৮, ০৯:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরেক শিশুর প্রাণ কাড়ল পরিবহন ধর্মঘট

কালের কন্ঠ : শ্রমিকদের অবরোধের কারণে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় বাবার কোলেই মৃত্যু হয়েছে আরো এক নবজাতকের। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার গণিগঞ্জ বাজার পয়েন্টে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুই দিনের শিশুটি ঠাণ্ডাজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা তাকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গণিগঞ্জ বাজারে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাঁকে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই বাবার কোলে মারা যায় শিশুটি।

সারা দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করা শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হচ্ছে। তবে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে আবারও তাদের কর্মবিরতি তথা ধর্মঘটের। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, তাঁদের আট দফা দাবি মেনে নিতে আগামী ৩ নভেম্বর সরকারকে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে তাঁরা টানা ৯৬ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাবেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানান।

কর্মবিরতির নামে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি থামিয়ে কর্মজীবী, রোগী, চিকিৎসক, সাংবাদিকদের চলাচলে বাধা দেয়। আগের দিনের মতো বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুল্যান্স চলতেও বাধা দেওয়া হয়। রাস্তায় নামা গাড়ির চালক ও যাত্রীদের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অব্যাহত ছিল। এ তাণ্ডবের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা, সুনামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা গতকাল রাস্তায় মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে। ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার ঘটনায় মুখে কালো রং মেখে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা, আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি না করা এবং অ্যাম্বুল্যান্সসহ রোগী বহনকারী গাড়ির অবাধ চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানায় তারা।

মানববন্ধনের সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘একজন শ্রমিক নেতা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন; কিন্তু তিনি বলেছেন আন্দোলন সম্পর্কে কিছু জানেন না।’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে যে শিশুটি মারা গেছে, এটাকে আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু বলতে পারি না। এটা স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। আমরা শ্রমিকদের আন্দোলনের বিপক্ষে না। কিন্তু এ ধরনের অরাজকতা কোনো শ্রমিক করতে পারে না। এ ধরনের অপকর্মগুলো সরকারের একটি মাফিয়াচক্র দ্বারা করা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এসব অরাজকতা মেনে নিতে পারি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য ও হয়রানির প্রতিবাদ করে সুনামগঞ্জের ‘যাত্রী সংহতি’ নামের সংগঠন। শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে শহরবাসী তার প্রতিবাদ জানায়। জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইশতিয়াক আহমেদ শামীম বলেন, ‘দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে হয়রানির প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ জেলা যুবলীগের সদস্য সবুজ কান্তি দে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র নূরুল ইসলাম বজলু, সাংবাদিক মাহবুবুল হাসান শামীন, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, লেখক সুখেন্দু সেন, কবি ইকবাল কাগজীসহ আরো অনেকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, জেলা পরিষদ সদস্য ফৌজি আরা শাম্মী, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সীতেশ তালুকদার কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের পোশাকে পোড়া মবিল ছুড়ে মারা, গাড়ি ভাঙচুর, অ্যাম্বুল্যান্স আটকের জেরে শিশুমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার শুভ্র বলেন, ‘পরিবহন মালিক শ্রমিকরা নির্দিষ্ট কিছু দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছিল। ধর্মঘটের নামে তারা সারা দেশে নৈরাজ্য করেছে। কেন আমাদের বোনের ড্রেসে কালি ছুড়ে মারা হবে, কেন বাসের জানালা ভাঙচুর করা হবে—সাত দিনের শিশুবাহী অ্যাম্বুল্যান্স আটকে দেওয়ার ফলে শিশুটির মৃত্যুর দায় কে নিবে আমরা সেটা জানতে চাই।’

প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রথম দিন রবিবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডে মহিলা কলেজের বাসে হামলা চালায় আন্দোলনকারী পরিবহন শ্রমিকরা। ওই সময় বাসের জানালার কাচ ভাঙচুর করে চালকের শরীরে পোড়া মবিল লেপন করে দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্রীদের পোশাকেও পোড়া মবিল ছোড়া হয়। পরিবহন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জন-উদ্যোগ, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কমিটি। বিকেলে শহরের প্রধান সড়কের শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

দ্বিতীয় দিনেও নবজাতকের মৃত্যু

শ্রমিকদের অবরোধের কারণে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় সুনামগঞ্জে গতকাল বাবার কোলে এক নবজাতকের মৃত্যু প্রসঙ্গে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাতে গণিগঞ্জ গ্রামের মইনুল ইসলামের স্ত্রী সেলিমা বেগম একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। ছেলেটি জন্মের পরেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে তাকে গণিগঞ্জ বাজারে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি দ্রুত শিশুটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। ওই সময় গণিগঞ্জ বাজারে টহল দিচ্ছিলেন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। শিশুটির বাবা মইনুল ইসলাম একটি গাড়ি ম্যানেজ করে সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তাঁকে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরই বাবার কোলে মারা যায় শিশুটি।

মইনুল ইসলাম এ ঘটনা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধের কারণে আমার সন্তান মারা গেছে।’ গণিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে শ্রমিকদের অনুরোধ করেছিলাম শিশুটিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি দরকার। কিন্তু শ্রমিকরা আমাদের সুযোগ দেয়নি। যে কারণে বাবার কোলে নবজাতককে মরতে হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কয়ছর আহমদ বলেন, ‘পরিবহন সন্ত্রাসীদের এ নৈরাজ্য কোনোভাবেই মানা যায় না। সরকারের উচিত এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া।’

গতকালও রাজধানীর সড়কগুলো বাসশূন্য থাকে। অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল চলাচল করে। চলাচল করে বিআরটিসির বাস। কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন হয়ে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু যাত্রীদের ভিড় ছিল উপচে পড়া।

সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুতে সন্ত্রাস চালায় ২০-২৫ জনের পরিবহন শ্রমিকদের একটি দল। প্রতিটি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসচালক ব্রিজের কাছে এসেই বোকা বনে যান। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করলেও এখান দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে কোনো একটি প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস এলেই সেটিকে প্রথমে এক-দুজন হাত তুলে থামিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেটির ওপর। চালকদের যাচ্ছেতাই গালাগালি করছে এবং গাড়িগুলো যে পথে এসেছে সে পথেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের মারমুখী ভঙ্গি দেখে ব্যক্তিগত গাড়িতে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তাদের কাউকে কাউকে হাত জোর করে ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়।

এ ছাড়া এসব শ্রমিককে দেখা গেছে চলাচলকারী রিকশাচালকের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ টাকা চাঁদা নিতে। সকাল সাড়ে ১০টায় একটি প্রাইভেট কার জুরাইনের দিক থেকে কেরানীগঞ্জের দিকে যাওয়ার জন্য সেতুর টোল ঘরের সামনে যেতেই গাড়িটি আটকে দেন একজন মধ্যবয়স্ক শ্রমিক। তাঁর হাত তোলা দেখে গাড়িটি থামতেই সেই লোক চালককে ধমকাতে শুরু করেন, নির্দেশ দেন গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যেতে। একটু পরই ডক্টর লেখা প্রাইভেট কারও আটকে দেয় শ্রমিকরা। গাড়ির ভেতরে থাকা ডাক্তার তখন সামনের হাসপাতালে যাবেন বলার পর গাড়িটি ছেড়ে দেয় শ্রমিকরা। একই সময় আরো দুটি প্রাইভেট কার মাওয়ার দিক থেকে এলে শ্রমিকরা সেগুলোকে ফেরত পাঠায়। সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে দেয়নি তারা। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। এ সময় ব্রিজ পেরোনোর জন্য কয়েকটি ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। শুধু ব্রিজ পার করে দিতেই রিকশাচালকরা একেকজনের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেয়। ব্রিজের কেরানীগঞ্জের পাশে গিয়ে দেখা যায়, ওই রিকশাচালকদের কাছ থেকে যাত্রীপিছু পাঁচ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নমিতা সাহা ও তাঁর এক বোন। তাঁরা বাস না পেয়ে রিকশায় চড়ে আরামবাগ যেতে চেয়েছিলেন। রিকশাচালকরা তাঁর কাছে দেড় শ টাকা ভাড়া চান। ভাড়া শুনে বিস্মিত নমিতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কী করুম ভাই। অনেকটা পথ হাইট্টা আইছি। অহন রিকশা ভাড়া চায় দেড় শ টাকা। কী শুরু হইলো দ্যাশটার মধ্যে। দেশে কি সরকার নাই?’

উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো হনহন ছুটছিল। আধাঘণ্টা পর পর চলছিল বিআরটিসির বাস। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ সড়কে অবস্থান করে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহপুর মোড়ে ট্রাফিক ওয়াচ টাওয়ারের সামনের রাস্তা ফাঁকা। বাহন বলতে শুধু রিকশা আর অটোরিকশা। উচ্চবিত্তরা বেশি ভাড়ায় রিকশা, সিএনজি ও অ্যাপভিত্তিক সেবায় গন্তব্যে গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বেকায়দায়। আব্দুল্লাহপুর মোড়ে ওভারব্রিজের নিচে আধাঘণ্টার বেশি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আব্বাস আলী। দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর গন্তব্য ফার্মগেট। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের জন্য বিআরটিসি বাস ধরতে পারিনি। আবার কখন আসে, সেই জন্য বসে আছি। সিএনজিতে ভাড়া চায় ২০০-২৫০ টাকা।’

রাজধানীর ফার্মগেট-গাবতলী এলাকায় গণপরিবহন ছিল না। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল রাস্তায়। দুপুর দেড়টায় গাবতলী বাস টার্মিনালে পঞ্চগড়ের সিজু মিয়া ও তাঁর বড় ভাই কালাম মিয়া জানান, ১০ দিন আগে রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতালে এসেছিলেন সিজু মিয়ার চিকিৎসার জন্য। গত শনিবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেওয়া হয়। কিছু কাজ শেষ করতে সময লেগে যায়। ফলে এক দিন হাসপাতালের বারান্দায় থাকার পর রবিবার সকালে বাস টার্মিনালে এসে আটকে যান।

নিজের অফিসের কাজে সকালে সিনজি অটোরিকশায় মতিঝিল গিয়েছিলেন মিরপুর-২ নম্বরের বাসিন্দা মীর জাহাঙ্গীর। দুপুরে কোনো রকম হেঁটে ও রিকশাযোগে ফার্মগেট পৌঁছার পর মিরপুর যেতে আর কোনো ব্যবস্থা পাচ্ছিলেন না। কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই দুর্ভোগ আর সহ্য হওয়ার মতো নয়। দেশে আইনের শাসন, সরকার অছে বলে মনে হয় না।

সিলেটে দ্বিতীয় দিনেও নৈরাজ্য

গতকালও সিলেটের বিভিন্ন সড়কে অ্যাম্বুল্যান্স আটকানোর ঘটনা ঘটেছে। অটোরিকশা এবং ক্ষেত্রবিশেষে রিকশা চলাচলেও বাধার সৃষ্টি করে শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকেই নগরের হুমায়ুন রশীদ চত্বর, শাহজালাল ব্রিজ, উপশহর পয়েন্ট, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ, তামাবিল সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে পরিবহন শ্রমিকরা বাধা দেয়। দুপুর ১২টায় নগরের উপশহর পয়েন্টে ব্যক্তিগত গাড়ি আটকেও বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। দুপুরে নগরের শাহজালাল সেতু ও হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় রিকশাচালকদের মারধর এবং যাত্রীদের সঙ্গেও বাজে আচরণ করে শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশ কাছাকাছি নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিল।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল) আদালতে আমার মামলার তারিখ ছিল। হাজির না হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়ে যাবে। যে কারণে ফজরের নামাজ পড়েই সিলেটের উদ্দেশে রওনা হই। কখনো হেঁটে, কখনো রিকশায়, এভাবে সিলেটে এসেছি।’

সংবাদপত্রের গাড়ি চলাচলেও বাধা

শ্রমিকরা গতকাল সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সংবাদপত্রবাহী অটোরিকশাও আটকে রাখে। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জে প্রতিদিন অটোরিকশাযোগে সংবাদপত্র নেওয়া হয়। পরে শ্রীমঙ্গলের গণমাধ্যমকর্মীদের হস্তক্ষেপে দুপুরের পর কমলগঞ্জে সংবাদপত্র পৌঁছে। এদিকে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের পরিদর্শক মো. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, ধর্মঘটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে না। ফলে দুই দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আমদানি ও রপ্তানিকারক সাইফুর রহমান ও তাসদিক হোসেন জানান, ভারতীয় অংশে তাঁদের আমদানি করা প্রচুর আপেল আটকা পড়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে কোনো ট্রাকই শুল্ক স্টেশনে যেতে পারছে না।

অ্যাম্বুল্যান্সচালকের মুখে কালি

গতকাল বিকেলে ত্রিশাল সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সচালক মো. জলিল একজন গর্ভবতী নারীকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল থেকে নিয়ে আসার পথে শ্রমিকরা বইলর নামক স্থানে গাড়ি থামিয়ে তাঁকে মারধর ও শরীরে কালি লাগিয়ে দেয়। দুপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই নামক স্থানে রশিদ নামের এক বাইকযাত্রীকে দাঁড় করিয়ে কালি লাগিয়ে দেয় শ্রমিকরা। মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে, জিরো পয়েন্ট, রাগামারা মোড়, বগার বাজার, বৈলর, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে সকাল থেকেই পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়