শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর
আপডেট : ৩০ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আদালত চত্বরে পুলিশের নজিরবিহীন অভিযান

সমকাল : ঢাকা জজকোর্ট প্রাঙ্গণে 'আসামি' গ্রেফতারে অভিযানের নামে নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটিয়েছে পল্টন থানা পুলিশ। সাজানো চুরির মামলায় বিধি ভেঙে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সৈকত পাল নামে এক তরুণকে ধরতে সাদা পোশাকে সেখানে যায় পুলিশের ৭-৮ সদস্য। আদালত এলাকা কোতোয়ালি থানার আওতায় পড়লেও অভিযানে অংশ গ্রহণকারীরা বিষয়টি কোতোয়ালি থানার কাছে গোপন রাখে। বিধি অনুযায়ী এক এলাকার পুলিশ অন্য এলাকায় অভিযানে গেলে সংশ্নিষ্ট জোনের পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করতে হয়। এ ছাড়া থানা পুলিশের সদস্য হয়ে তারা 'ডিবি পুলিশ' পরিচয় দেয়। ফিল্মি স্টাইলে তারা সৈকতকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সৈকত পাল ও তার মা ইতি পালকে বেদম মারধর করতে থাকে। এ সময় ২-৩শ' আইনজীবী জড়ো হয়ে পুলিশকে বাধা দেন। শুরু হয় আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি। পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে না পারায় আইনজীবীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানান আইনজীবীরা। এরপর কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। কীভাবে পল্টন থানার ওসি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত না করে আদালত চত্বরে অভিযান টিম পাঠাল তা নিয়ে বিস্মিত তারা। এ ঘটনার নেপথ্যে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত না করে সাদা পোশাকে আদালত চত্বরে অভিযানে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল রাতেই পল্টন থানার এসআই আবদুল হান্নান ও সোমেন বড়ূয়াকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলী নোমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সিনিয়র আইনজীবী জানান, একজন বিচারপ্রত্যাশীকে বিনা ওয়ারেন্টে আদালত চত্বর থেকে সাদা পোশাকে এসে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালানো নজিরবিহীন।

পুলিশ সৈকত পাল নামে যে তরুণকে গ্রেফতার করতে আদালত এলাকায় যায় তিনি সুরেশ সরিষার তেল কোম্পানির কর্ণধার সুধীর সাহার একমাত্র মেয়ে লিমা সাহার স্বামী। পরিবারের অমতে বিয়ে করায় একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে সৈকত ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হয়রানি করে আসছেন সুধীর সাহা। সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিতে সস্ত্রীক আদালতে যান সৈকত। আদালতের কার্যক্রম শুরুর পরপরই ওতপেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা সৈকতকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে সৈকতের মায়ের ওপর আক্রমণ করে তারা। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুধীর সাহা। পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশের পাহারায় সৈকত ও তার মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালতের আদেশে লিমাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া এমন তাড়াহুড়া করে সেখানে পুলিশের যাওয়ার কথা নয়। যে কোনো অভিযোগে মামলা হলে তা যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযুক্তদের ধরবে পুলিশ। তবে সেটা না করেই সিভিল ড্রেসে অভিযানে গেছে। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মতিঝিল বিভাগের এডিসি শিবলী নোমান বলেন, অভিযানে যাওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী ডিসি, এডিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর কথা। কিন্তু অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা এ নিয়ম মানেনি।

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, এ ব্যাপারটি মামলার বাদী পরিস্কারভাবে বলতে পারবেন। কী অভিযোগে মামলা, কেন আদালত এলাকায় সিভিল ড্রেসে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে গেল তা নিয়ে মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান তিনি।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই আবদুল হান্নান বলেন, ওসির নির্দেশে তারা সৈকতকে ধরতে আদালত এলাকায় অভিযানে যান। মামলার বাদী ও অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা হয়েও স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি তিনি।

সাদা পোশাকে তিনি সেখানে অভিযানে যাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ছবিতে দেখা গেছে, তারা সবাই সাদা পোশাকেই অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে সৈকতকে মারধর করা হয়।

সৈকতের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, সৈকত আদালতের আশ্রয়প্রার্থী হয়ে কোর্ট প্রাঙ্গণে যান। আদালতের আশ্রয়প্রার্থীকে হয়রানি করা ঠিক নয়। সৈকতের অসুবিধা হলো তিনি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ২৮ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন তিনি। বিয়ে মেনে না নিয়ে শুরু থেকে তরুণীর বাবা সুরেশ সরিষার তেলের মালিক তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, ডিবি পরিচয়ে ৭-৮ জন লোক সিভিল ড্রেসে আদালত চত্বর থেকে সৈকত পালকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর সেখানে হট্টগোল দেখে মুহূর্তে ২-৩শ' আইনজীবী জড়ো হন।

কোতোয়ালি থানার ওসি এবিএম মশিউর রহমান বলেন, পুলিশের বিধি অনুযায়ী অন্য কোনো ইউনিট বা থানা থেকে ভিন্ন জোনে অভিযান চালাতে হলে সংশ্নিষ্ট থানাকে অবহিত করতে হয়। পল্টনের কোনো পুলিশ আদালত এলাকায় অভিযানে আসবে- এটা আগে অবহিত করা হয়নি।

সৈকত পাল অভিযোগ করেন, সুধীর সাহা কোটি টাকার ওপরে খরচ করে পল্টনের পুলিশকে ম্যানেজ করেছেন। তাই আজিজুর রহমান পাটোয়ারী নামে অচেনা এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় তাকেসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২ হাজার ৩৩০ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়। যদিও আজিজুর নামে কারও সঙ্গে তার কোনো পরিচয় নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়