তরিকুল ইসলাম : রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মিয়ানমার বৈঠকে বসছে আগামীকাল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠিত উভয় দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের নীতি নির্ধারণী বৈঠকটি আগামীকাল দুপুরে রাষ্ট্রিয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একটি তালিকা হস্তান্তর করবে ঢাকা। যেখানে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে গত মে মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলো মিয়ানমারের এই প্রতিনিধি দলটি। সে সময়ও প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখতে দেশটির কোনো প্রতিনিধি দল দ্বিতীয় বারের মতো এবার কক্সবাজার যাচ্ছেন। দলটির ঢাকা সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করেন।
সে সময় তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আবাসন সুবিধা, চলাফেরা ও জীবনযাত্রাসহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতিও পর্যবেক্ষণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সু’চির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উপর জোর দেওয়ার পর দেশটির প্রতিনিধি দলের এবারের ঢাকা সফর।
যদিও বাংলাদেশ এর আগে প্রত্যাবাসনের আওতায় রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেশটিকে হস্তান্তর করলেও ঐ তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। তবে, দেশটির প্রতিনিধি দলের এবারের সফরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আসার সম্ভাবনা দেখছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা।
একই সঙ্গে তারা বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি নেওয়ার পরও মিয়ানমার সরকার একের পর এক অজুহাত তোলায় কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এর দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু’চি।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক তৈরি হোক, বাংলাদেশ এটা চায়না । গতবছর অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে আসা এই শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া কোনোভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব না।
আপনার মতামত লিখুন :