শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৭:১৯ সকাল
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৭:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উনার চলে যাওয়া মানে একজন ভাল মানুষের প্রস্থান

আহমেদ ইসমাম: গত কয়েক মাস আগে টানা ১২- ১৩ ঘন্টা বাইক চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পিরোজপুর জেলার সরুপকাঠির শুন শান এক ডুপ্লেক্স বাড়িতে রাত ৯টায় পৌছালাম। অনেক ডাকাডাকির পর বাড়ির মেইন গেট খুলে ভিতরে ঢুকলাম। মনে মনে আবার ভয়ও লাগছে, ভুল ঠিকানায় চলে এলাম না তো? এর পর প্রায় ১০ মিনিট পর কেউ একজন ভিতর থেকে বলছে, ভিতরে বসেন। এবার কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। ভিতরে গিয়ে বুঝলাম উনি আসলে অনেক পর্দাশীল তাই সরাসরি আমাদের সামনে আসতে চাচ্ছেন না।

এবার অনেকটা আগ বাড়িয়েই নিজের পরিচয় দিলাম। তিনি দুর থেকেই বল্লেন আমি বুঝতে পেরেছি। আপনাদের চাচা তারাবি পড়তে গেছে, আপনারা চাইলে উপরে গিয়ে বসতে পারেন। এই বলেই তিনি আবার ঘরের ভিতরে চলে গেলেন। এই শুনশান বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। একটি ঘরের দরজা নিজেই ঠেলে খুললাম। তখনো যেন ভয় কাটছিল না। তার পরেও কাপড় বদলে সাওয়ার নেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আমার বন্ধু অপুকে বল্লাম কি আছে কপালে জানি না তুই বাহিরে থাক আমি সাওয়ার নিয়ে আসি। এর আগে দুই দিন ধরে জার্নি করার কারনে খুব ভাল করে সাওয়ার নিলাম। এতে অনেক সময় চলে গেছে নিজেও জানি না। বের হয়েই দেখি খাটের উপর চাচা বসা। দেখেই চমকে গেলাম। আমাকে দেখেই খুব সাবলিল ভাষায় বলে উঠলেন ‘কেমন আছ বাবা? তুমি ইসমাম না?’ জি চাচা। তিনি বল্লেন আমি সম্রাটের বাবা। ( সম্রাট ভাই হচ্ছেন আমাদের অর্থনীতির নগর সম্পাদক। ) আমারা তার এলাকায় গেছি, এটা শুনে তিনি তার বাসায় যেতে বলেছিলেন। আর তার বাবাকে বলেছিলেন আমার দুইটা ছোট ভাই বাসায় যাবে । তিনি আমাদের দেখে এমন করছিলেন যেন মনে হয় আমরা তার সন্তান এবং কয়েক বছর পর বাড়িতে ফিরেছি। আহা! তার মুখের হাসিই বলে দিচ্ছে যে তিনি আমাদের দেখে কতটা খুশি। অথচ তার সাথে এর আগে কখনোই দেখা হয়নি। কিন্তু ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমাদেরকে কতই না জানেন। তিনি নিজে থেকেই বলে উঠলেন নিচে খাবার রেডি, তাড়াতাড়ি নিচে নামো। খাবার টেবিলে গিয়েই মন জুরে গেল, কোন পদের খাবার নেই এই টেবিলে? হাস, দেশি মুরগি, চিংড়ী মাছ, ইলিশ মাছ, ডিম, কয়েক রকমের ভাজি, ডাল( আরো কয়েক পদের ছিল নাম মনে নেই)। আজকাল বাসায় মন্ত্রী গেলেও মানুষ এত আপ্যায়ন করে কি না সন্ধেহ আছে। আমাদের চোখে মুখে ক্লান্তি আর ক্ষুধার ছাপ থাকায় তিনি বার বার করে আমাদের প্লেটে বিভিন্ন পদের খাবার তুলে দিচ্ছিলেন। আর আমরাও মনের সুখে খাচ্ছিলাম। এর মাঝে হঠাৎ খেয়াল করলাম বাড়িতে কেউ নেই, তবে এত খাবার কে রান্না করেছে? প্রশ্ন করতে উত্তর- কেন? তোমাদের চাচি রান্না করেছে। আমি অবাক হলাম। এরপর যেন খাবার আর গলা থেকে নামছে না। এমন বয়স্ক একজন মানুষকে আমরা কষ্ট দিলাম! এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। উল্টো আরো চাচা বলছেন, তোমাদের চাচি আর আগের মত রান্না করতে পারে না। এখন বয়স হয়েছে তো। এর পরেও তিনি অনেকটা জোড় করেই খাবার আমাদের পাতে তুলে দিলেন। এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হলাম যে বহু দিন হল আমার বাবা এ ভাবে আমায় আদর করে না। আপনার আদর আমার বাবার চেয়ে কম না। ( আমার বাবা গত ৮ বছর ধরে অসুস্থ) খাওয়া শেষ করেই চলে গেলাম উপরের বেলকনিতে। জায়গাটা বেশ বড় আকাশে চাঁদ তখন আমাদের মাথার উপর। চারদিকে তখন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর নানা জাতের গাছপালার সমারোহ। যেন আমি এখন ভূস্বর্গে বসে আছি। এরই মাঝে জমে উঠেছে আমাদের আড্ডা। আমাদের আড্ডায় সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছিল অরাজনৈতিক আলাপ। আমার সবচেয়ে মজা লেগেছিল তিনি সকালে উঠে কোন পত্রিকা পরেন এটাই বার বার বার বলছিলেন। ক্লান্ত থাকায় কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি নিজেরাও টের পাইনি। সকালে উঠে আবিষ্কার করলাম মাথায় বালিশ আর গায়ে কাথা দেওয়া আছে। এটা নিশ্চই চাচার কাজ। নিজের কাছে ভালই লাগছিলা জীবনে প্রথম খোলা আকাশের নিচে রাত কাটালাম তাও আবার চাঁদনি রাত। গত রাতেই কথা হয়েছিল চাচা ভোর বেলা সদরে যাবে। তিনি আমাদের অনুররোধ করেছিলেন আমরা যেন দুপুরে যাই। কিন্তু দুপুরে রওনা দিলে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে তাই যথা রিতি সকালেই রওনা দিলাম। তার আগে টেবিলে বিভিন্ন রকমের নাস্তা রেডি করে রেখেছিলেন। সকালে দেখা হল সম্রাট ভায়ের ছেলে ডানিয়াল আনকেল এর সাথে। তিনি আমাদের অনেকটা যত্ন করে নাস্তার আয়োজন করলেন। এর পর ১০ টার দিকে ঢাকার দিকে রওনা দিলাম। এতক্ষন যে মানুষটির কথা বল্লাম তিনি গতকাল মারা গেছে। খবরটা শুনেই বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠল। খুব ইচ্ছে হল মানুষটিকে শেষ বারের মত একবার দেখতে। কিন্তু পারলাম না। আমার ভাগিনা গত ২০ দিন ধরে ঢাকা শিশু হাসপালের আইসিউতে। প্রতি রাতে আমাকেই থাকতে হয় হাসপাতালে। চাচার জন্য জন্য গতকাল থেকেই মনটা ভাল নেই। শুধু বার বার ওনার কথা মনে পড়ছে। এমন হাশি মাখা মুখটা আর হয়ত দেখা হবে না। এত আদর করে আর কেউ হয়ত খাওয়াবে না। তাই আমার কাছে মনে হয় ওনার চলে যাওয়া মানে একজন ভাল মানুষের প্রস্থান।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়