ড. আকতার বানু : ১। গত পরশুদিন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে গেছিলাম পরীক্ষার ফল প্রকাশের কাজে। সেখানে অফিস থেকে দুইটা টেবুলেশন শীট খুঁজে বের করতে সময় লাগলো প্রায় আধাঘন্টা। তাও সেটা সম্ভব হয়েছে ওখানে যে ছেলেটা থাকে, ওর আন্তরিক চেষ্টায় । নাহলে আরো বেশি সময় লাগতে পারতো।
২। আমার অফিসে পরীক্ষার হলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের ডিউটির বিলের কাগজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না পনেরো দিন ধরে। শেষে খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিল নতুন করে আবার বানালাম। অযথা সময় নষ্ট। আরো সমস্যা আছে। কোন কোন কর্মচারী রোজ এক/দেড় ঘন্টা দেরীতে অফিসে আসে। এলেও একটু পরেই চলে যায় রাজনৈতিক নেতাদের অনুষ্ঠানে। অধিকাংশ দিন অফিসে আসেই না। কম্পিউটারে যার কাজ করার কথা, সে কম্পিউটার অন করতে জানেনা। তার কাজ শেখার কোন ইচ্ছা বা চেষ্টাও নেই। কারণ, সে মাস শেষে ঠিকই বেতন পায় এবং তাকে কেউ কিছু বলেনা। বললেও সে তোয়াক্কা করেনা। কেন করেনা, সেটা নাইই বললাম।। ফলে ভুগতে হয় আমাদের। যে কাজ অফিসের লোকেদের করার কথা, সেটাও শিক্ষকদেরই করতে হয়। আর কর্মচারী অফিসে না থাকলে দরকারি কাগজের অভাবে কাজ করতে পারিনা, কাজ পড়ে থাকে। কত রকমের অনিয়ম যে এখানে হয়, বলে শেষ করা যাবেনা। যেন বাংলাদেশটা একটা মগের মুল্লক !
৩। আমার মেয়ের হাতের লেখা বেশ সুন্দর। ওর লেখা ছোট ছোট এবং ও খুব বেশী ফাঁকা ফাঁকা করে লেখে না। ফলে কম পৃষ্ঠাতেই ওর লেখা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ওর ক্লাসমেটদের অনেকেই গাদা গাদা পৃষ্ঠা নেয় এবং ফাঁকা ফাঁকা করে লেখে। ওদের মধ্যে এরকম একটা ধারণা তৈরি করে দেয়া হয়েছে যে, শিক্ষকরা খাতা ভালভাবে না পড়ে শুধু পৃষ্ঠা গুণে নম্বর দেন। তাই বাচ্চারা ইচ্ছা করে ফাঁকা ফাঁকা করে লেখে এবং বেশি পৃষ্ঠা নেয়। এই ধারণার কারণে কি পরিমাণ কাগজের অপচয় হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সৃজনশীল পদ্ধতির এটিও একটি বিরাট নেতিবাচক দিক। কাগজের এই বিশাল অপচয় রোধ করার জন্য আশু উদ্যোগ দরকার।
উন্নত দেশগুলোতে পেপারলেস অফিস চালু হয়েছে। সেখানে সব কাজ হয় কম্পিউটারে। সব ফাইল, ডেটা, ডকুমেন্ট এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে, এক রুম থেকে আরেক রুমে, এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যায় ইমেইলে। ফলে কোন কাগজ খুঁজে বের করার দরকার পড়ে না। কাগজ হারানোর ভয় থাকে না। একজন অফিসে না থাকলে, অফিসের বাইরে যে কোন খানে থাকলে বা ছুটিতে থাকলেও ইমেইলে যেকোন সময়, যেকোন ফাইল লেনদেন করা সম্ভব।
পেপারলেস অফিস বা কাজ করার আরেকটি বড় কারণ হলো, কাগজ কেনার জন্য টাকার সাশ্রয় করা এবং পরিবেশ রক্ষা করা। কাগজ তৈরির জন্য গোটা বিশ্বে প্রতিনিয়ত একটা বিশাল পরিমাণ গাছ কাটা পড়ে। সেটা বন্ধ করা। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে, সব না হলেও অধিকাংশ কাজ পেপারলেস করে ফেলতে পারে। বিষয়টি সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
লেখক : প্রফেসর, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়/ সম্পাদনা: ফাহিম আহমাদ বিজয়।
আপনার মতামত লিখুন :