শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:৪০ সকাল
আপডেট : ২৮ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো সরকার নেই

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলুস্টকহলম: গত ৯ সেপ্টেম্বর সুইডেনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পূর্বে শেষবারের মতো জাতীয় সংসদের অধিবেশন হলেও সংসদকে কখনো মুলতবি ঘোষণা করা হয়নি। হটাৎ করে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংসদ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকে। পরবর্তীতে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথেই পূর্বের সংসদ অটোমেটিক বাতিল হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো সরকার গঠন কিংবা সরকারের আকার ছোট করে আনা হয় না। নির্বাচন পরবর্তীতে নুতন জাতীয় সংসদে সংখাগরিষ্টের সমর্থনে সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করে।

৯ সেপ্টেম্বর সুইডেনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সুইডিশ সংসদ এখন পর্যন্ত সংখাগরিষ্টের সমর্থনে সরকার গঠন করতে না পারায় সুইডেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভীন এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী পরিষদের নেতৃত্বে সরকার পরিচালনা করছেন। এর পূর্বে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পাওয়াতে স্টেফান লোফভীনের প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে এখানে একটা বড় পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ ও প্রধানমন্ত্রী নুতন করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। তারা শুধু পূর্বের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকরের তদারকি করবেন মাত্র এবং সরকার প্রধান হিসেবে পূর্বের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে পশ্চিমা গণতন্ত্রের ধারা।

বাংলাদেশে আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত যাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বলা হয়ে থাকে সেখানে নির্বাচনের সময় কি কোনো নির্বাচনকালীন সরকার গঠন কিংবা আকার ছোট করে আনা হয়? যদি না হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের বেলায় এধরণের প্রশ্ন আসবে কেন? কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন নির্বাচনকালে সরকারের আকার ছোট করে আনা হতে পারে।

হটাৎ করে তিনি কেন এধরণের কথা বললেন তার উত্তর তিনি নিজেই বলতে পারবেন। তবে সরকারের ভেতরে থেকে তার মিডিয়ায় এধরণের বক্তব্য দেওয়া আদৌ উচিত হয়েছে কি না আশাকরি তিনি একটু ভেবে দেখবেনl তার বক্তব্য কিছুটা হলেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে বলা যেতে পারে। তাহলে কি তিনিও চান নির্বাচনকালীন সময়ে বর্তমান সরকারের কিছুটা হলেও পরিবর্তন?

অতি সম্প্রতি নুতন প্রতিষ্ঠিত ঐক্য জোটের নেতা ডক্টর কামাল হোসেন নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য একটি  সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। কামাল হোসেনের মতো একজন আন্তর্জাতিক মানের আইন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এধরণের একটি অগণতান্ত্রিক দাবি আশা করা যায় না। আসলে সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না উঠিয়ে তিনি কৌশলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলছেন। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামকরণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যাতে কোনো সরকার গঠন করা না হয় এজন্য সংসদে আইন পাশ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ডক্টর কামাল হোসেন বিষয়টা ভালো করেই জানেন। তাই তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না বলে কৌশলে বলছেন নির্বাচনকালীন সরকার। কিন্তু তিনি যদি সত্যি সত্যি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে এধরণের দাবি থেকে তার সরে আসা  উচিত।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রশ্নই আসে না। দেশে অস্থিতিশীলতা না করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। কথাটার অবশ্যই বাস্তবতা আছে। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানে এধরণের কোনো সরকার গঠনের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। তাহলে যিনি সংবিধানের প্রণেতা তার কণ্ঠে কেন আসছে এই  অসাংবিধানিক দাবি?

এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ডক্টর কামাল হোসেন দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর আর কোনোদিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকা ও দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন ড. কামাল হোসেনের মধ্যে তার কোনো নিদর্শন নেই। সম্প্রতি  তিনি যাদের নিয়ে ঐক্য গঠন করেছেন তাদের অনেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে সক্রিয় ও সুপরিচিত। শুধু তাই নয় তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থী। সুতরাং এবারের নির্বাচনেও তার সফল হওয়ার কোনো সম্ভবনা আছে কি না তাতে সন্দেহ আছে।

এব্যাপারে সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়েছে ড. কামাল হোসেনকে  সামনে রেখে, কিন্তু এটার মূল নিয়ন্ত্রণ বিএনপির হাতে। ড. কামাল হোসেনকে শুধু ফেস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হয়তো তাই। সম্ভবত এই কারণেই কাদের সিদ্দিকীসহ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী অনেকে এই ঐক্য জোটে যোগ দেননি।

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিরোধীদের সাথে নিয়ে এধরণের একটা ঐক্য গঠন করে ড. কামাল হোসেন কতটুকু সফল হতে পারবেন সে বেপারে অনেকেরই প্রশ্ন আজ। তিনি একদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কথা বলছেন অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সাথে নিয়ে বেঁধেছেন জোট। এই বৃদ্ধ বয়সে ডক্টর কামাল হোসেনের মধ্যে এধরণের একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন কখনো কেউ আশা করেনি। সম্ভবত এর পেছনে কোনো গভীর রাজনৈতিক চক্ৰান্ত ঘাপটি মেরে বসে আছে। সময়মতো তারা বেরিয়ে আসবে। তখন আর ডক্টর কামাল হোসেনের কাছে ঐকজোটের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। অথবা জোট ভেঙে যাবার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে। কামাল হোসেনকে নিয়ে এর আগেও জোট হয়েছে। কিন্তু তার স্থায়িত্ব বেশিদিন ছিল না। ডান বাম , বঙ্গবন্ধু  ও  মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত তার বর্তমান এই ঐক্যজোট কতদিন টিকে থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি বিরোধী ঐক্যজোটের অবশ্যই প্রয়োজন। তা না হলে  সরকারের ভুলভ্রান্তি নিয়ে সংসদে আলোচনা সমালোচনা করবে কে? বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংসদের মতো আগামী নির্বাচনে  আবারো একটি একইধরনের সংসদ আসুক  জনগণের তা আকাঙ্খিত নয়। সুতরাং বিলম্ব না করে মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডা হাতে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। একমাত্র তাহলেই আগামী নির্বাচনে একটি শক্তিশালী বিরোধী জোটের সংসদে আসার সুযোগ হবে। ডক্টর কামাল হোসেনকে সামনে রেখে ঐক্যজোটের নামে যদি কেউ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে তাহলে তাকে প্রতিহত ও নিয়ন্ত্রনে আনা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। জনগণ আর ২০১৪ নির্বাচন পূর্ববর্তী অবস্থা দেখতে চায় না। এবেপারে সরকারকে আগে থেকেই সাবধান হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করছেন। লেখক: সুইডেনে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়