শাহানুজ্জামান টিটু : রোববার সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এই ধর্মঘটে প্রভাব পড়েছে সারাদেশে। একদিকে রাজধানীতে গণপরিবহন নেই। নাকাল অবস্থা রাজধানীবাসীর। পরিবহন ধর্মঘটের সর্মথনে রাজপথে পিকেটিংয়ে নেমেছে পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের দাবি মানুষ কতটা সর্মথন করলো আর না করলো সেটা বিষয় নয়। উদ্দেশ্যে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে তাদের অনৈতিক দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা। এসব সাত সতের নিয়ে কথা না বলে, আসুন দেখা যাক এই পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ কতোটা ভোগান্তি শিকার হচ্ছে, আর এই প্রতিবেদক সরেজমিনে কি দেখে এলেন।
সকালে সাড়ে ৯টায় শনির আখড়া থেকে যখন পান্থপথে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম তখনই এক ভ্যান চালক আমাকে বললেন, ভাই বাইক নিয়ে বের হয়েছেন। যেতে পারবেন না। ওরা রাস্তায় অবরোধ করে রেখেছে। কিন্তু ওই ভ্যান চালকের কথায় খুব একটা যে গুরুত্ব দিলাম না সেটা হয়ত ওই ভ্যান চালক বুঝতে পেরেছে। কিন্তু বোঝার ভুলটা ছিলো আমার। যথারীতি বাইক নিয়ে হানিফ ফ্লাইওভারের দিকে এগুতোই দেখি প্রচন্ড জ্যাম। একদিকে অফিসমুখী ও কর্মজীবী মানুষ তার কর্মক্ষেত্রের দিকে যে যেভাবেই পারছে পায়ে হেটে, রিকসা ভ্যানে গাদাগাদি করে ছুটে চলেছেন।
আর অন্যদিকে ধর্মঘটের সর্মথনে রাস্তার অবরোধ করে ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখে পিকেটিং করছে অল্প বয়সি কিছু সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক। দেখে মনে হলো তাদের বয়স খুব বেশি হলে ১৫ কিংবা ১৬ বা তারও কম। হাতে পোড়া মোবিলের পট। যা নিয়ে তারা সিএনজি কিংবা প্রাইভেট কার চালকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
তারা জানতে চাচ্ছে, সিএনজি কেন বের করেসিস, জানিস না আজ পরিবহন ধর্মঘট। আমাদের বাঁচা মরার লড়াই। এসব বলে তাদের মুখের ওপর ছুড়ে মারা হচ্ছে পোড়া মোবিল। এই অবস্থার মধ্যে বাইক চালকদেরকেও তারা ছাড় দিতে নারাজ। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে পুরো পরিস্থিতি দেখলাম। ভাবলাম মোবাইলের ক্যামেরাটা ব্যবহার করে কিছু ছবি তুলে রাখি। নিউজের কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু আমরা অবস্থানটা পিকেটারদের এতো কাছাকাছি যে ওই সাহসটুকু দেখাতে পারলাম না। কারণ পিকেটারা ওই সময় এতোটাই উগ্র ছিলো যে তারা কোনো কিছু শুনতে বা মানতে নারাজ।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই জায়গাটিতে যতটা সরব উপস্থিতি ছিলো। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের দিনে এই একই জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। যদিও ওই স্থান থেকে যাত্রাবাড়ি থানার দূরুত্ব মাত্র কয়েক মিনিটের পথ।
যাই হোক এসব বাধা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে কাটাবন, হাতিরপুল হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত যখন পৌঁছে পড়লাম জ্যামের পাল্লায়। বাইকে বসে অপেক্ষা।
এর মধ্যে রাস্তার পাশে ফুটপথের ওপরে দাঁড়িয়ে এক অফিসগামী যুবক রিকসা চালকদের উদ্দেশ্যে বললেন, এবার তোমরাও ধর্মঘট ডাকো। রিকসা চালকের সটান উত্তর, ভাই, এটা আমাদের পেট-নীতি। আর যেটা চলছে ওটা রাজনীতি। এই কথোপকথনের শেষটা আর শোনা সম্ভব হয়নি। ততক্ষণে সিগন্যাল ছেড়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :