তরিকুল ইসলাম : জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্যে চীন। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে শুধুই আশ্বস্ত করে চলছে দেশটি! সর্বশেষ গত বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক বিশেষ সভা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ নিরাপত্তা পরিষদের নয়টি দেশ অংশগ্রহণ করলেও চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের দায়ব্ধতার প্রশ্নে ভেটো দেয়।
ঠিক তার একদিন পর শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন ঢাকা সফররত চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রী ঝাও কেজি। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ ভূমিকা পালন করবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন। একই দিনে সচিবালয়ে বাংলাদেশ ও চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চীনা প্রতিনিধিদল বলেছে, চীন বিশ্বাস করে যারা বাংলাদেশে এসেছে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শিগগিরই বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে গত বছরের ১৯মার্চ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিতে চেয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু সে সময়ও চীন ও রাশিয়া ভেটো দেওয়ায় তা আটকে যায়। নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে একটি বিবৃতি নেওয়া হলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যেত বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো কার্যকর কোনো উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে পারছেনা। চীন ও রাশিয়ার ভেটো থেকে এটা স্পষ্ট যে, নিরাপত্তা পরিষদের অ্যাজেন্ডা থেকে মিয়ানমারকে বাইরে রাখতে চায় ওই দুই প্রভাবশালী দেশ।
সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা নিপীড়ন বিরোধী প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন না পাওয়ায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার মতে, এ নিয়ে জাতিসংঘে দফায় দফায় প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে কিন্তু তাতে ধারাবাহিকভাবে ভেটো প্রদান করে আসা চীন ও রাশিয়ার অবস্থান এখনও পাল্টায়নি। গত অগাস্টে আল-জাজিরাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকীকরণের পরিবর্তে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার পক্ষেই অবস্থান চীন ও রাশিয়ার।
তবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলেও বাংলাদেশ বারবার বলে আসছে, আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে মিয়ানমার তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে। এ কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব ফোরামেই মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার নীতি নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :