স্মৃতি খানম: যে হস্তশিল্পে ফুটে উঠছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য, সেই শিল্পে ভর করে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। সুঁই-সুতায় দারিদ্র্যকে বেঁধে সাবলম্বী হচ্ছেন সুবিধা বঞ্চিত অনেক নারী। যাদের কারকাজে হাল পোশাকের ফ্যাশনে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে হস্তশিল্পের বাজার কয়েক হাজার কোটি টাকার। গেল অর্থবছরেই রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার পণ্য। বাজার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে, গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নে বড় ভূমিকা রাখবে মনে করছেন তারা।
ষাটোর্ধ রত্না বিশ্বাস। হারিয়েছেন স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে। দুই মেয়ে স্বামীর সংসারে। নি:সঙ্গ জীবনের পথ চলায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সুতার কাজ করে। জীবন যুদ্ধে হার না মানা আরেক নারী রপালী বেগম। বিয়ে হলেও স্বামী নেয়নি ঘরে, ভাইদের সংসারে পড়ে থাকার কথা ছিলো বোঝা হয়ে। কিন্তু না। কাঠের তক্তায় হাতুড়ি আর বাটালে আঁকছেন ব্লক। রং বেরংয়ে এই ব্লকের ছাপ পড়ছে হাল ফ্যাশনের পোশাকে।
রপালি কিংবা মালার মতো এমন হাজারো স্বল্প কিংবা অশিক্ষিত নারী নকশা খোদাই, কারচুপি গাঁথা কিংবা কাপড়ে রংয়ের ছাপ দেয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। হস্তশিল্পে কাজ করা নারীরা জানান, সাত হাজার, নয় হাজার ও ১০ হাজার বেতন পাই। সেই সাথে ডিপিএস করেছি, এবং নিজের নামে জায়গাও কিনেছি। ঘরে ও বাইরে দুজেন কাজ করতেছি, কোন কিছুর ঠেক পড়ে নাই।
অন্য বয়স্ক নারী জানান, আমরা এক বেটা ছিল, সে মারা গেছে। কিন্তু এখন-তো আমার চলন লাগবো। দেখার মতো কেউ নাই। বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি বলছে, বর্তমানে পোশাক, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেতের তৈরি ঝুড়ি'সহ হরেক রকমের হস্তশিল্প পণ্য তৈরি হচ্ছে। শতভাগ দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদন থেকে গ্রাহক পর্যন্ত পৌছাতে মূল্য সংযোজন হচ্ছে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত।
বাংলা ক্রাফটের সভাপতি আশরাফুর রহমান ফারুক বলেন, সরকার আমাদেরকে এক্সপোর্ট ছাড় দিচ্ছে। যারা একশো ডলার হ্যান্ড্রি ক্রাফট এক্সপোর্ট করতে পারে, তারা সরকার থেকে ১০ ডলার পাচ্ছে। এক সময় নারীরা পরিবারে নিজেদের বোঝা মনে করলেও এখন সময় বদলেছে। পুরষদের পাশাপাশি শক্ত হাতে পরিবারের হাল ধরছেন, কর্মব্যস্ত এই নারীরাও। তাদের স্বনির্ভরতায় শক্তিশালী হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।সূত্র: সময় টেলিভিশন
আপনার মতামত লিখুন :