শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৫৭ রাত
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জনগণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু, স্টকহলম : ব্যক্তি প্রচারে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন তুঙ্গে। যে যেভাবে পারছে নিজ পরিচয়কে বড় করে তুলে ধরছে। দেশের একমাথা থেকে আরেক মাথা যেখানেই দৃষ্টি সেখানেই ব্যানার, পোস্টার আর দেওয়ালে লিখন। বাংলাদেশে সর্বত্র এখন ব্যক্তি প্রচারের হাওয়া বইছে। এই প্রতিযোগিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জয়ের ছবি ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত প্রচার চালানো হচ্ছে। একই অবস্থা বিএনপির মধ্যেও। এখানেও জিয়াউর রহমান,বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবির পাশে নিজের ছবি নিয়ে চলছে প্রচার। এক্ষেত্রে তারেক রহমানের রহমান বাদ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে জিয়া। অথচ তারেক রহমান প্রকাশ্যে বলেছেন, আমার নাম তারেক রহমান তারেক জিয়া নয়। তবুও বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে এই প্রচারণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাসভবন থেকে বের হতেই ওপর পাশে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দেয়াল ঘেসেও টাঙানো ব্যানার। অর্থাত প্রধানমন্ত্রীকে এই ব্যানার দেখেই দিনের কাজ শুরু করতে হবে। বিলবোর্ড নিয়ে নিজের নাম প্রচারের এই রাজনীতি এখন দেশের রাজধানী থেকে তৃণমূলে লক্ষণীয়।

এদিকে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সারা বছরের তুলনায় এই সময় ব্যক্তি প্রচারণা এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। নির্বাচনের সময় বদলে যায় বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের দৃষ্টি থাকে তখন বাংলাদেশের দিকে। স্বতঃস্ফূর্ত এই পরিবেশ সত্যি দেখার মতো। জানিনা এমন আনন্দঘন পরিবেশ আর কোনো দেশে সৃষ্টি হয় কি হয় না। তবে এই আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে অনেকসময় নেমে আসে অন্ধকার। নিজেদের মধ্যে শুরু হয় ঘাত প্রতিঘাত। নিহত ও আহত হয় অনেক মানুষ। এসকল দলীয় সমর্থকদের নিয়ে পরবর্তীতে আর কোনো কথা হয় না। তাদের অসহায় পরিবারের খোঁজ খবর কেউ রাখে না। তবু রাজনীতি ও নেতা নেত্রীর শুভদৃষ্টি পাওয়ার আশায় দল ও নেতার সমর্থনে কর্মীরা সংঘাতে জড়িয়ে পরে। তৎক্ষণাৎ মামলা হলেও তার কোনো নিরপেক্ষ রায় পাওয়া যায় না। এভাবেই অতীতে প্রতিটি নির্বাচনে অনেকের প্রাণ হারাতে হয়েছে। তাই নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাধারণ জনগণের মধ্যে বাড়ছে ভয় ভীতি।

নির্বাচনকালে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় সমর্থকদের মধ্যে আক্রমণাত্বক সংঘাত হতে দেখা যায়। সুতরাং বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে অতীতে যেভাবে প্রতিপক্ষের সাথে সংঘাত হয়েছে সেভাবেই হয়তো আবারো হবে। আবারো হয়তো ঝরে যাবে অনেক প্রাণ। পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও নির্বাচনের দিন শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অতীতে এধরণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তাদের কিছু কিছু ভুলের কারণে সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আহত ও নিহত পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শুরু থেকেই উপযুক্ত পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। দেশের জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন। সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, দেওয়ালে লিখন ও মাইকিং সহ নানা প্রচারে মেতে উঠবে বাংলাদেশ। এবেপারে সরকারেরকরণীয় আছে অনেক। নির্বাচনের তারিখকে সামনে রেখে একটি নির্দিষ্ট দিন ও সময় জারি করতে হবে যখন রাজনৈতিক দলগুলো বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, দেওয়ালে লিখন ও মাইকিং করার সুযোগ পাবে। জনগণের যাতে অসুবিধা না হয় এজন্য রাতে কিংবা সন্ধ্যার পর ঘরের বাহিরে মাইক বেবহার নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, দেওয়ালে লিখন যেখানে সেখানে করা যাবে না। ঢাকা সহ বড় বড় শহরের ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার কিংবা কোনো কিছু লিখার কথা নিষিদ্ধ থাকলেও দলীয় সমর্থকেরা পোস্টার কিংবা শ্লোগান লিখে তাদের দেওয়ালের সুন্দর্যতা নষ্ট করেন। বাড়ির মালিকদের এসকল ব্যক্তিদের বাধা দেওয়ার কোনো সাহস নেই। এভাবেই চলে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার। কিন্তু আর কতদিন?

তবে বাংলাদেশ সরকার চাইলে আইন জারি করে এধরণের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করতে পারে। অন্যদিকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এবেপারে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি যদি জনগণের জন্যই হয়ে থাকে তাহলে তাদের উপর কেন হবে এই অত্যাচার? রাজনীতিবিদরা তাদের এই দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। নেতা নেত্রীরা নির্বাচন শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের স্ব স্ব দলকে নিজ নিজ বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, দেওয়ালে লিখন উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর কোনো রাজনৈতিক দলের বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, দেওয়ালে লিখন লক্ষণীয় হলে সেই রাজনৈতিক দলকে সরকারের নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ জরিমানা করার সুযোগ থাকবে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যে সকল রাজনৈতিক দল এধরণের বেআইনি কাজ করবে তাদের উপর থেকে জনগণকে সমর্থন উঠিয়ে নিতে হবে। কারণ এদের মুখে গণতন্ত্রের কথা থাকলেও বাস্তবে তারা গণতান্ত্রিক নয়। গণতন্ত্রকে এসকল রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার অস্ত্র হিসেবে বেবহার করছে।

আসছে নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ কোনো সংঘাত হানাহানি রক্তারক্তির এক ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখতে চায় না। দল মত নির্বিশেষে সকলেই চায় একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। জনগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে তার বেবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের উপর। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও শক্তি প্রতিযোগিতায় না নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে। এখন সকলেরই দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে। সরকার বিষয়টা একটু গুরুত্ব সহকারে দেখবে কি?
লেখক সুইডেনে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়