দেবদুলাল মুন্না : তরিক মাহমুদ একজন ফেসবুক ইউজার। তার এক বন্ধুর জন্মদিনে গিয়েছিলেন। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হবে এটি ছিল মূল আগ্রহ। কিন্তু গিয়ে দেখেন বন্ধুরা প্রাথমিক হাই হ্যালো করে যে যার মতো নিজেদের স্মার্টফোনে ফেসবুক ব্যবহারে ব্যস্ত। সবাই আছে, কিন্তু সবাই যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। বিন্দু আহমেদ নামের একজন জানালেন,আমার পরিচিত তিনজন গৃহবধু কাজের অবসরে ফেসবুকের ম্যসেঞ্জারে পরিচিত হোন নতুন বন্ধুদের সাথে। প্রথমে ভাব বিনিময়। একপর্যায়ে প্রেমেও জড়িয়ে পড়ছেন। তার এক বান্ধবী তিন সন্তানের মুখ বিবেচনা করেননি। ভেঙে গেছে সংসার শুধু ফেসবুকের কারণেই। রোজি বেগম বলেন, অনেক পুরুষ ইউজার পোস্ট বা কমেন্টের চেয়ে নারীদের সাথে ইনবক্সে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী। ইনবক্সে তারা বাজে অফার দেয়। এমন এক পুরুষকে চিনি যার তিনটি ফেইক আইডি। ফেইক আইডি থেকে সে এসব বাজে অফারগুলো দেয়। পরে তাকে আমি ব্লক করতে বাধ্য হয়েছি। এহসান নামের এক ইউজার বলেন, ফেসবুকিং এক নেশার নাম। ঘুম থেকে ওঠে মোবাইলে ডাটা ওপেন করে নোটিফিকেশন, নিউজফিড দেখে দিনের শুরু। রাতে ঘুমানোর আগে ভার্চুয়ালি কোন মেয়েকে কফি খাওয়ার অফার দেওয়া। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মতে, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ৯৯ শতাংশই ফেসবুক ব্যবহার করেন। আর এ সংখ্যা আড়াই কোটির মতো। যাদের মধ্যে ২ কোটি ২৬ লাখ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবহারকারী ৫ হাজার মানুষের সঙ্গে বন্ধু হতে পারছেন। আবার ফলোয়ার সংখ্যায় রাখা যাচ্ছে সীমাহীন বন্ধু। ফলে এ আসক্তি মনোদৈহিক নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের মাঝে একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তবে বন্ধ করা উচিত নয়।
প্রযুক্তিবিদ সালাম গাজী বলেন, ফেসবুকের ভাল মন্দ দুটো দিকই আছে। এখন ফেসবুকেও অনেকে ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিতে পারেন অল্পখরচে। আবার অনেক নিউজ আগে চলে আসে নিউজ ফিডে। একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে যে কোন সময়। স্থানিক সমস্যা ঘুচে গেছে। এখন কে এটিকে কীভাবে ব্যবহার করবে এটি ইউজারের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। ফেসবুক একটা সমাজও।
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক এম ওয়াহিদ বলেন ‘ ফেসবুক সংসদের মতোও কাজ করে। ভাল দিক অনেক আছে। তবে এ ও ঠিক, ভার্চুয়ালি নৈকট্য বাড়লেও বাস্তবে মানুষে মানুষে দুরত্ব বাড়ছে।
সম্পাদনা : নুসরাত শরমীন
আপনার মতামত লিখুন :