মানবজমিন : জলবায়ু পরিবর্তনে বড় রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে ‘হিমালয়ান ভায়াগ্রা’। আসলে এটি কোনো ভায়াগ্রা নয়। এটি হলো শুঁয়োপোকার ফাঙ্গাস। স্বর্ণের চেয়ে এই ফাঙ্গাস অধিক দামি। আর এশিয়ায় একে ডাকা হয় ‘হিমালয়ান ভায়াগ্রা’ নামে। এ অঞ্চলে যৌন উত্তেজক চমৎকার ওষুধ হিসেবে একে দেখা হয়। এ জন্য এর এমন নাম। তবে একদল গবেষক সোমবার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই হিমালয়ান ভায়াগ্রা এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। স্থানীয়ভাবে এর নাম ‘ইয়রচাগুম্বা’।
আগে এর নাম ছিল ওপিওকোরডিসেপস। খবরে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে এই ‘ইয়রচাগুম্বা’ নিয়ে চীন ও নেপালের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে অনেকে নিহত হয়েছেন। ‘ইয়রচাগুম্বা’ যে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে তার পক্ষে প্রমাণিত কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবু লোকজন ‘ইয়রচাগুম্বা’ পানিতে দিয়ে তা ফোটায়। এরপর সেই পানি চায়ের মতো পান করে। অথবা স্যুপের সঙ্গে যোগ করে ওই পানি। তারপর তা পান করে। তাদের বিশ্বাস এই ‘ইয়রচাগুম্বা’ মিশ্রিত পানি পান করলে ক্যানসার থেকে শুরু করে সব রকম রোগ সেরে যায়। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ইয়রচাগুম্বা’ হলো বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান জৈবিক পণ্য। এর ওপর ভিত্তি করে কয়েক লাখ মানুষের উপার্জন বা জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। তারা ‘ইয়রচাগুম্বা’ সংগ্রহ করে তবেই বেঁচে আছেন। গবেষকরা বলেছেন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এই ফাঙ্গাসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চাহিদা বেড়ে যায় আকাশচুম্বী। দামও সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে। বেইজিংয়ে স্বর্ণের দামের তিনগুণ দামে বিক্রি হতে পারে এই ‘ইয়রচাগুম্বা’। অনেকের সন্দেহ অতিমাত্রায় সংগ্রহ করার কারণে বিলুপ্ত হওয়ার পথে বা ঝুঁকিতে রয়েছে ‘ইয়রচাগুম্বা’।
তবে গবেষকরা এর আরো কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য গবেষকরা ‘ইয়রচাগুম্বা’ উৎপাদনকারী, সংগ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর আগে নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীনের কমপক্ষে ৮০০ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন বিষয়টি বুঝতে। ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক গঠন, ভৌগোলিক ফ্যাক্টরগুলো ও পরিবেশগত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর তারা রিপোর্টে বলেছেন, ওই চারটি দেশের প্রায় দুই দশকের ডাটা ব্যবহার করে তা যাচাই করে দেখা গেছে, শুঁয়োপোকার ফাঙ্গাস উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, শুধু অধিক হারে উৎপাদন বা ‘ইয়রচাগুম্বা’ সংগ্রহের কারণেই তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে এমন নয়। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে জড়িত। এমনটা বলেছেন ওই গবেষণা দলের রিপোর্টের লেখক কেলি হোপিং। তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো থাকাকালে এই কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বোইস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে হিউম্যান-এনভায়রনমেন্ট সিস্টেমস-এর সহকারী প্রফেসর। তবে তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি- অধিক হারে ‘ইয়রচাগুম্বা’ সংগ্রহ নাকি জলবায়ু পরিবর্তন, কোন্টি এই ফাঙ্গাসের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে।
‘ইয়রচাগুম্বা’ ফাঙ্গাসটি কোণ-আকৃতির। ৯৮০০ ফুট উপরে শুধু এদেরকে পাওয়া যায়। পরজীবী ফাঙ্গাসটি নিজেকে শুঁয়োপোকার মধ্যে আস্তে আস্তে প্রবেশ করায় এবং তাকে আস্তে আস্তে মেরে ফেলে। এর বেড়ে ওঠার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। শীতের সময় এর তাপমাত্রা থাকতে হয় হিমাংকের নিচে। তবে সেখানকার মাটিতে বিদ্যমান পানি যেন স্থায়ীভাবে জমে না যায়। ১৯৭৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার শীতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য উষ্ণ ছিল। বড় একটি এলাকায়, বিশেষ করে ভুটানে এমন অবস্থা ছিল। এমন তাপমাত্রা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ‘ইয়রচাগুম্বা’র ওপর।