বাংলা ট্রিবিউন : ‘আমি মার খাবো, এরপর ওখান থেকেই শিখবো’- কথাগুলো তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের। বুধবার জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন-আপকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এই পেসার ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডেভিড মিলারের এক ওভারে ৫ ছক্কা হজম করার পর গত বিপিএলে তার ওপর দিয়ে টর্নেডো বইয়ে দেন ড্যারেন স্যামি। ইনিংসের শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনকে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান মারেন ৪ ছক্কা ও এক বাউন্ডারি। এরপর থেকেই ছন্নছাড়া বোলিং করছিলেন সাইফউদ্দিন।
তবে ফেনীর এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার শেষ দুই ম্যাচে জানিয়ে দিয়েছেন মিলার কিংবা স্যামির বিপক্ষে করা সেই ওভার দুটি ছিল নিতান্তই ‘দুর্ঘটনা’। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ভূমিকায় দারুণ অস্ত্র হয়ে উঠছেন সাইফউদ্দিন। বুধবার তার পেসে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামে। সব মিলিয়ে ৪৫ রান খরচায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন এই পেসার।
ম্যাচসেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সাইফউদ্দিন নিজের বিশ্বাসের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন এভাবে, ‘ওই ছক্কার কথা যতদিন ক্রিকেট খেলব মনে থাকবে। তবে এটা মাথায় রেখে ক্রিকেট খেলা যায় না। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ক্রিকেট খেলতে হয়। সাফল্য পেতে গেলে একটু হোঁচট খেতেই হয়! আমি আসলে সবসময় বিশ্বাস করি, আমার মা বলতেন একটা ছেলে হাঁটা শিখতে গেলে বারবার হোঁচট খায়। তাই বলে কি তার হাঁটা বন্ধ হয়ে যায়? একই রকম আমিও মার খাবো, ওখান থেকেই তো শিখব। আমি ছোটবেলা যখন অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ খেলতাম, তখন থেকেই ডেথ ওভারে বোলিং করি। হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম কয়েকটা ম্যাচে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করি সামনের ম্যাচে এই ধারা সচল রাখতে পারব।’
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ একজন ব্যাটিং-পেস অলরাউন্ডার খুঁজছে। আগের ম্যাচে ২৯ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকলেও ব্যাট হাতে ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সাইফউদ্দিন। বুধবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ না পেলেও বোলিংয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলে বেশ কিছু সিরিজে ছিলেন না তিনি। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ফিরেই পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাইফউদ্দিন বলেছেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। যেহেতু আমি বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলি, আমার প্রথম কাজই হচ্ছে বোলিংয়ে ভালো করা। বলে উইকেট পেলে বা ইকোনমি ভালো থাকলে খুব ভালো লাগে। পাশাপাশি ব্যাটিংটা করতে পছন্দ করি। চেষ্টা করি দুটো ভালো করার।’
পঞ্চম ওভারে মাশরাফি বোলিং আনেন সাইফউদ্দিনকে। নিজের প্রথম ওভারেই সাফল্য পান ২১ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। সফরকারী দলের ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে আস্থার প্রতিদান দেন তিনি। শুরুতেই বোলিং করা নিয়ে সাইফউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম মাশরাফি ভাই আমাকে আনুক। আমি চাচ্ছিলাম কিছু একটা করে দেখাতে। আমি রুবেল (হোসেন) ভাইয়ের অসুস্থতার কারণেই সুযোগ পেয়েছি। চিন্তা করেছি, আমাকে এমন কিছু করতে হবে, যেন পরের ম্যাচেও সুযোগ পাই।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত হওয়া ম্যাচে ইমরুল ৯০ ও লিটন ৮৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। তার আগে অবশ্য সাইফউদ্দিন ৪৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ২৪৬ রানে আটকে রাখতে সহায়তা করেছেন। তাই লিটন ও ইমরুলকে পেছনে ফেলে সাইফউদ্দিনই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘চেষ্টা ছিল দলের জন্য কিছু করার। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে ভাবনা ছিল না। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে নিজের নাম শুনে কিছুটা অবাক হয়েছি।’
আপনার মতামত লিখুন :