মেজর (ডা.) খোশরোজ সামাদ :
১। বরগুনা । রাতে কনসার্টে গাইবেন জেমস। ছোট শহরের হাজার মানুষ দারুণ উত্তেজনায় বিহ্বল। স্বপ্নে দেখা তারকার কনসার্ট শুনবে নিজ শহরের মাটিতে। চোখের কয়েকগজের মধ্যেই দেখবে সারাজীবনে সরাসরি দেখবার প্রতীক্ষিত শিল্পীকে।
২। এর মধ্যে খবর এলো আইয়ুব বাচ্চু আকাশে উড়াল দিয়েছেন। স্টেডিয়ামে হাজারো মানুষ যেন জেমসের মধ্যেই রকস্টার বাচ্চুকে খুঁজতে চাইছে। তিনযুগের আত্মার আত্মীয় - প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে জেমস তখন বাকহীন। আবেগী শ্রোতারা কোন কথা শুনতে চাইলো না। মঞ্চে উঠিয়ে দেয়া হল জেমসকে। গিটার হাতে দিয়ে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দেয়া হল তাঁর সামনে। সারাজীবনে মঞ্চে অসাধারণ চৌকস জেমস তখন দ্বিধামিশ্রিত অসহায়ত্ব নিয়ে নিজের সাথে নিজে লড়ছেন। উদ্বেলিত হাজার দর্শকের মন না ভরলে সহসা সেটি 'ঠরড়ষবহঃ গড়ন'- এ রূপান্তর হতে পারে এটি তাঁর পুরোপুরিভাবে জানা।
৩। না, কন্ঠ দিয়ে গান আসছে না। অনেক কষ্টে গিটারে টুংটাং বাজানোর চেষ্টা করলেন। নোড সব ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে। রূপালি গিটারটাকে পাথরের মত ভারী মনে হচ্ছে। নাহ! পারলেন না জেমস। আয়োজকরা দর্শকের কাছে পনের মিনিটের সময় চাইলেন। মঞ্চের পিছনে চলে গেলেন জেমস। মানসপটে বাচ্চুর সাথে সান্নিধ্যের হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠছে। কত মায়া! কত ভালবাসা। প্রিয় বন্ধুকে ফেলে সাড়ে তিনহাত জমিতে কে আগে যাবে, সে নিয়ে দুজনের খুঁনসুটিতে জেমস কখনই বাচ্চুকে জিততে দিতেন না। সেটিকে মিথ্যে করে অনেক দূরে চলে গেছেন বাচ্চু ।
৪। আবার দর্শকের সামনে জেমস দাঁড়ালেন। পড়ন্ত শরতের বাতাস তখন উত্তাল। জেমসের চোখের অশ্রুভরা জল বাঁধা মানলো না। বহমান সাগরের স্রোতের চেয়ে তীব্র সে অশ্রুজল। কান্নাভেজা কন্ঠে জেমস ধরলেন' পাগলা হাওয়ার তরে, মাটির প্রদীপ নিভু নিভু করে---'
৫। মাত্র কিছুক্ষণ আগেই বাচ্চুর জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। অশ্রুভেজা জেমসের সামনেই খেমটা নাচছে হাজারও পাগলা, হাজারও পাগলি। মাইক্রোফোনে হাজার হাজার ভোল্ট তীব্র উন্মাদনায় ছড়িয়ে পড়ছে ' হে পাগলা, হে পাগলি--
লেখক : উপ-অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যারেটরী/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :