কালের কন্ঠ : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে, মেঝেতে, সিঁড়ির পাশে, বাথরুমের সামনে—কোথাও ঠাঁই নেই! সবদিকেই পোড়া রোগী। রোগীদের হৃদয়বিদারক গোঙানি, স্বজনদের আহাজারি, চিকিৎসকদের ছোটাছুটি, অসহনীয় পোড়া গন্ধ—সব মিলিয়ে অমানবিক এক পরিবেশ। দৃশ্যটা বর্তমানের নয়, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের আন্দোলনকালে পেট্রলবোমার সহিংসতা, একের পর এক যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময়ের।
একসঙ্গে এত বেশি অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো না থাকায় দেখা দেয় নানা সংকট। আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকলেও সামর্থ্য-সংকটে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় বড় ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। সেই ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন শেষে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১১টায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই বার্ন ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করবেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রকল্প। কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে প্রকল্পের কাজ। অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ও দেশের প্রথম জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। তিনটি বেইসমেন্টসহ ১৮ তলাবিশিষ্ট মূল ভবনসহ মোট প্রকল্প ব্যয় ৫২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই ইনস্টিটিউটের আওতায় বার্ন ইউনিট, প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও একাডেমিক উইং অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসা, দক্ষ জনবল তৈরিতে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে এই ইনস্টিটিউটের জন্য দুই হাজার ৩০টি পদের জনবল অনুমোদন হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই বার্ন ইনস্টিটিউট অগ্নিদগ্ধ মানুষের সুচিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরি করতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই বিশ্বমানের এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেছি।’
ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটের হাসপাতালে থাকছে ৫৪টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটারসহ অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত জরুরি বিভাগ। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য এলাকায়ও পর্যায়ক্রমে এর শাখা-প্রশাখা চালু করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :