এনটিভি : পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের একটি বাড়ি থেকে গতকাল সোমবার ৪০ মণ ভেজাল ঘিসহ ছয়জনকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ভেজাল ঘি ধ্বংস করা হয়।
পামঅয়েল ও বাটারঅয়েল একত্রে চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘিয়ের ফ্লেভার মিশিয়ে দেশের নামীদামি কোম্পানির মোড়ক লাগিয়ে সারা দেশে ঘি বাজারজাত করা হচ্ছিল। অথচ ঘিয়ের সামান্যতম উপাদান ছিল না তাতে। ছিল না কোনো দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য।
এভাবেই লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের সরদারপাড়ার নুরুল মাস্টারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছিল ভেজাল ঘি। সেই বাড়িতে হানা দিয়ে ৪০ মণ ভেজাল ঘিসহ ছয়জনকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাশের ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর মহল্লার শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নুরুল মাস্টারের বাড়িটি ভাড়া নিয়ে নকল ও ভেজাল ঘি তৈরি করে আসছিলেন। ওই ঘি স্থানীয় হাটবাজার ও পাবনা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হতো। ভেজাল ঘি তৈরির জন্য বাড়ির মূল দরজা সব সময় বন্ধ থাকত। অপরিচিত লোকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। এমনটি বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী।
কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই ভেজাল ঘি কারখানায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাছুদুর রহমান। ওই সময় ভেজাল ঘি তৈরির মুহূর্তে প্রায় ৪০ মণ ভেজাল ঘিসহ হাতেনাতে ছয়জনকে আটক করেন। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে মূল হোতা ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগরের শহিদুল ইসলাম পালিয়ে যান। অভিযানে সহযোগিতা করেন ভাঙ্গুড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল ইসলাম ও তাঁর ফোর্স।
আটক ছয়জন হলেন কারখানার কর্মচারী ফরিদপুর উপজেলার বাসিন্দা মিলন (৩৮), বিস্ট আলী (৬০), কামরুল (৩৮), জীবন ঘোষ (৩০), শহিদুল ইসলাম (৪০) ও ভাঙ্গুড়া পৌর সরদারপাড়া মহল্লার রজব আলী (৬০)। এ সময় প্রায় ৪০ মণ ভেজাল ঘি, পাঁচ ব্যারেল ভেজাল পামঅয়েল, ৩৭ কার্টন ভেজাল বাটারঅয়েল, চার বস্তা ঘিয়ের ফ্লেভার ও ভেজাল ঘি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভাঙ্গুড়ার ইউএনও মো. মাছুদুর রহমান বলেন, আটক করা ভেজাল ঘিয়ে ঘি তৈরির কোনো উপাদান ছিল না। শুধু ছিল ঘিয়ের ফ্লেভার।
এদিকে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আটক করা ‘ঘি’ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনসমক্ষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। আটক ছয়জনকে ভোক্তা অধিকার আইন, ২০০৯-এর ৪৩ ধারায় এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপশি মূল হোতা শহিদুল ইসলাম ও তাঁর শ্বশুর শামছুল আলমের বিরুদ্ধে পুলিশকে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আপনার মতামত লিখুন :