মহিব আল হাসান : সদ্য প্রয়াত হয়েছেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। খানিকটা হুট করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিংবদন্তী এই শিল্পী রেখে গেছেন মেয়ে সাফা ও ছেলে তাজোয়ারকে। কিছুদিন আগে যমুনা টিভির ‘পথে প্রান্তে’ অনুষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের নিয়ে লম্বা কথাও বলেছিলেন বাচ্চু।
আইযুব বাচ্চু নিজের ছেলে মেয়ে সম্পর্কে পথে প্রান্তে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি আমার ছেলে মেয়েকে দেশের বাহিরে রাখছি। তারা ভালোভাবে পড়াশোনা করে ভালো চাকুরি করবে। তাদের গানের জগতে আসতে হবে না। ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে অনেকে গর্ব করবে এমন কিছুই করবে তারা। যেন বিশ্ব দরবারে দেশের নাম ফুটে তুলতে পারে।
কেনও গানে ছেলে মেয়ে আসবেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিল্পীদের গান ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু এই গানগুলো রিলিজ হওয়ার পর পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। কেনও হচ্ছে তারও জবাব দিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি বলেছিলেন এখনকার সময়ে কম্পিউটারের দোকান থেকে দশ টাকা দিয়ে হাজার হাজার গান ডিভাইসে ডাউনলোড করে নিয়ে যান। আর নতুন গানের একটি অ্যালবাম বের করলে তা রিলিজ হওয়ার সাথে সাথে দশ টাকায় চলে যায়। পৃথিবীর অনেক দেশের কপিরাইট আইনের মতো আমাদের আইনেও (কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ৪১ নং ধারায়) কপিরাইট সমিতি গঠন ও নিবন্ধন করার বিধান রয়েছে।
অথচ বাংলাদেশে কপিরাইট অফিস স্থাপনের বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি হলেও এখন পর্যন্ত সাহিত্য, সঙ্গীত বা অন্য কোন সৃষ্টিশীল কর্মের স্বত্ত্বাধিকারীদের স্বার্থরক্ষাকারি কোন সমিতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সমগ্র পৃথিবীতে এ জাতীয় সমিতি মেধাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই আইনের কোনও সুফল পাই না তাই আমি নিজেও কোনও অ্যালবাম করিনি। এসব কারণে আমি আমার ছেলে মেয়েকে এই জগত থেকে আলাদা করেছি।
এরপরও আইযুব বাচ্চু ছেলেকে দক্ষ গিটারিস্ট বানিয়েছেন। বাসায় বন্ধু বান্ধবের সাথে বাজানোর জন্য। ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজোয়ারকে প্রথমবার স্টেজ শোর মধ্য দিয়ে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন ২০১৪ সালে। বাবার সঙ্গে গিটার হাতে মাত করে দিয়েছিলেন তাজোয়ার।
সম্প্রতি বাবাকে হারিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি আশা করি আপনি যেখানেই থাকুন ঠিক আগের মতোই এ রকম করে হাসছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে ছাড়া পৃথিবীটা খালি মনে হচ্ছে। যারা এই লেখা পড়ছেন তারা আমার বাবার মৃত আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন।’ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে তার ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব বাবাকে নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমনটিই লিখেছেন।
বাবার মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেননি আহনাফ। পরিসংখ্যান নিয়ে পড়াশোনা করছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ায়। বাবাহীন পৃথিবীর শূন্যতা ছুঁয়ে গেছে তাকে। সে শূন্যতা থেকেই বাবাকে নিয়ে দুই লাইনে নিজের আবেগ ব্যক্ত করলেন তিনি। বাবার পথ ধরেই আহনাফ সেই শৈশব থেকে গিটার চর্চা করে আসছেন। আইয়ুব বাচ্চু তাকে তাজো নামে ডাকতেন।
ছেলেকে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি চেয়েছি আহনাফের জীবনের শুরুটা হোক একটা ভালো জায়গায়। ওর শুরুটা হোক আপনাদের নিয়ে, পুরো দেশকে নিয়ে। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমাকে আর এলআরবিকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, আমার ছেলেকেও একইভাবে ভালোবাসবেন।’
গত ১৮ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু। তিনি একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক।
আপনার মতামত লিখুন :