অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন প্রায় এক বছর আগে মারা যান। অথচ ১০ অক্টোবর পুলিশের ওপর ককটেল ছুড়ে মারার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১৮ জন আসামির মধ্যে তাঁর নাম ১৫ নম্বরে।
মৃত ব্যক্তি আসামি হওয়ায় হতবাক স্থানীয় লোকজন ও পরিবার। জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ এখন বলছে, তদন্তের পর জসিম উদ্দিনের নাম বাদ দেওয়া হবে।
জসিম উদ্দিন বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে। বুধবার (১৭অক্টবর) দুপুরে সেখানে গেলে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন বলেন, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান জসিম। তিনি বিএনপির কর্মী ছিলেন, কোনো পদে ছিলেন না। স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘মরেও পুলিশের হাত থেকে মানুষ বাঁচতে পারবে না!’
এদিকে বিএনপির এক হিসাবে দাবি করা হচ্ছে, গত এক মাসে সারা দেশে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এতে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা মিলিয়ে আসামির সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার। গ্রেফতার হয়েছেন ৪ হাজার ৬০০ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠপর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি ধরে ধরে মামলার আসামি করা হচ্ছে। এ কারণে কোনো কোনো মামলায় মৃত ব্যক্তি, হজে থাকা, বিদেশে থাকা, বয়োবৃদ্ধ, গুরুতর অসুস্থ হয়ে চলাফেরায় অক্ষম ও কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীরাও আসামি হয়ে গেছেন, যা গণমাধ্যমে আসায় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।
মৃত জসিম উদ্দিনকে আসামি করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অনেক আসামি পালিয়ে যান। একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যদের আসামি করা হয়েছে।
তদন্তের পর মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন।
মৃত জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে করা মামলাটির বাদী বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এস এম জামাল উদ্দিন। এজাহারে বলা হয়েছে, ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নগরের বাকলিয়া থানার রাজাখালী মোড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে সংগঠিত হন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ককটেল, ছয়টি বিভিন্ন আকারের লোহার রড, বিস্ফোরিত ককটেলের ভাঙা কাচের টুকরা উদ্ধার করা হয়। পালানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয় হেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বাকলিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নবাব খান, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রাখা হয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে।
পুলিশের করা এই মামলায় জব্দ তালিকায় থাকা দুজন সাক্ষী হলেন স্থানীয় আলী আকবর ও মো. হারুন। দুজনই বলেন, তাঁরা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। পুলিশ বলেছে, তাই জব্দ তালিকায় সই করেছেন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানায় করা বিস্ফোরক মামলায় আহত এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা করেছিল পুলিশ। ঘটনার ছয় দিন আগে ২৩ সেপ্টেম্বর বাসায় পড়ে গিয়ে আঘাত পান ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম। পুলিশের এজাহারের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে চান্দগাঁও মধ্যম মোহরা মৌলভীবাজার এলাকায় ‘নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে’ বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলে ককটেল ছুড়ে মারা হয়। কিন্তু ককটেলটি বিস্ফোরিত হয়নি। মামলার এজাহারে ৭ নম্বর আসামি করা হয় ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমকে। খোরশেদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সূত্র: প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :