শিরোনাম
◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে: ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১২  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘনের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস ◈ ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৬:৩১ সকাল
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৬:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ময়মনসিংহের রাজা হতে না চাওয়া ছেলেটি আজ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

চ্যানেল আই: ১৯৯০ সালে চোখেমুখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভুটান থেকে বাংলাদেশে আসেন লোটে শেরিং। প্রত্যাশা একজন সুচিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২৮তম ব্যাচে যাকে বলা হয় এম-টুয়েন্টি এইট। আত্মবিশ্বাসী, আত্মপ্রত্যয়ী ও কঠোর পরিশ্রমী লোটে শেরিং স্বল্প সময়েই নজর কাড়েন সবার।

মেডিকেল কলেজে পড়াকালে র‌্যাগ ডে’ তে রাজা সাজতে রাজি না হলেও সেই লোটে শেরিং-ই আজ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ।

চ্যানেল আই অনলাইন-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে এম-২৮ ব্যাচে শেরিং-এর সহপাঠী, এখন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক নিউরোলজিস্ট ডা. মো. ইব্রাহিম খলিল শুনিয়েছেন ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংকে নিয়ে নানা কথা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে কাটানো স্বর্ণালি দিনগুলোর কথা। সেই ময়মনসিংহ শহর, বাঘমারা, চরপাড়ায় কাটানো সেই সময়ের কথা।

তিনিই জানালেন, লোটে শরিং বন্ধুমহলে পরিচিত ছিলেন ‘লেটে’ নামে।

সেসময় একসাথে ইরান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ভুটান এবং আফ্রিকার আরও অনেকে ভর্তি হলেও লোটে শেরিং যেনো অন্য সবার থেকে একটু আলাদাই ছিলেন। প্রথম প্রথম বাংলাটা ভালো বলতে না পারলেও পরবর্তীতে নিজের প্রচেষ্টায় অায়ত্ত্ব করে ফেলেন বাংলা ভাষা।

সহপাঠী ডা. মো. ইব্রাহিম খলিল এর ভাষায়: ‘প্রথম দিকে ওর একটু ভাষাগত সমস্যা ছিল। তখন অবসর সময়ে আমরা লেটেসহ অন্য দেশের যারা ছিল তাদের বাংলা শিখিয়ে দিতাম। এক পর্যায়ে লেটে এত ভালো বাংলা বলত এবং বুঝতো যে, ও যে বাংলাদেশি না এটাই বুঝতে পারত না কেউ।’

নিজের কাজ ও পড়াশুনায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন সদ্য নির্বাচিত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। মেডিকেলে পড়াকালে পুরোটা সময় জুড়েই তাকে মনোযোগী ছাত্র হিসেবেই জানতেন তার সহপাঠীরা। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার ফলাফলেও অন্যদের থেকে তিনি ছিলেন এগিয়ে।

১৯৯৮ সালে এমবিবিএস শেষ করার পরও থেকে যান বাংলাদেশে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে হয়ে ওঠেন কর্মদক্ষ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ থেকেই সম্পন্ন করেন এফসিপিএস।

বন্ধুমহলসহ পরিচিতজনদের কাছে কঠোর পরিশ্রমী বলেই সুপরিচিত ছিলেন ছোট্ট দেশ ভুটানের নতুন প্রধানমন্ত্রী।

হাসিখুশি সদালাপি লোটে শেরিং কে ভালোবাসতেন সবাই। ভিনদেশ থেকে আসায় কখনোই নিজেকে অন্যদের থাকা আলাদা করে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না তিনি। বরং বেশিই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। প্রতিদিন বিকেলে খেলাধূলায় অংশ নিতেন। ফুটবল, ক্রিকেট, ইনডোর গেমস কোথায় নেই শেরিং! সব জায়গাতেই ছিল তার প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতি। প্রিয় খেলা ছিলো টেবিল টেনিস

লোটে শেরিং এর খাদ্যাভাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন তার বন্ধু ডা. মোঃ ইব্রাহিম খলিল। নুডুলস খেতে ভীষণ পছন্দ করতেন ভুটানের সদ্য নির্বাচিত এ প্রধানমন্ত্রী। ইব্রাহিম খলিলের ভাষায়: ‘ও খুব নুডুলস পছন্দ করতো। প্রচুর নুডুলস খেতো।’

শুধু তাই নয় ঘুরে বেড়াতেও ভীষণ পছন্দ করতেন লোটে শেরিং। সুযোগ পেলেই বন্ধু ও ব্যাচমেটদের সাথে বেরিয়ে পড়তেন বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে।

পরিবারের প্রতি ভীষণ টান ছিলো লোটে শেরিং এর। গল্পে-আড্ডায় প্রায়ই বন্ধুদের কাছে বলতেন স্বজনদের কথা, নিকটাত্মীয়দের কথা।

র‌্যাগ ডের একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে লোটে শেরিং এর বন্ধু ডা. মোঃ ইব্রাহিম খলিল চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘আমাদের র‌্যাগ ডে’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলাম আমি। সেসময় আমরা সবাই মিলে চেয়েছিলাম অনুষ্ঠানে ওকে ‘রাজা’ সাজাতে। কিন্তু ও কোনোভাবেই রাজা সাজতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার একটি ছেলেকে আমরা রাজা সাজাই। বিষয়টা এখনো মনে পড়ে।’

ভুটানের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস ও এফসিপিএস করে ভুটানে ফিরে গিয়ে কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচেন শেরিং-এর মধ্য-বামপন্থি দল ডিএনটি পার্লামেন্টের ৪৭ আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে জয় পায়।

এটি ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট শুরু হওয়ার পর তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন। ২০০৮-এর নির্বাচনে জয় পাওয়া দল ডিপিটি এবারের নির্বাচনে বাকি ১৭টি আসন পেয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে পরপর তিনটি নির্বাচনে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দল ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেল ভুটানে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই একটি নতুন দৃষ্টান্ত।

ভুটানের সংবিধান অনুসারে, প্রাইমারি রাউন্ডের ভোটযুদ্ধে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দু’টি দলই শুধু চূড়ান্ত রাউন্ডে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। সেই হিসেবে ডিএনটি এবং ডিপিটি প্রাইমারিতে উতরে পার্লামেন্টের নিম্নসভার ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

ক্ষমতাসীন দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে সেপ্টেম্বরের প্রাইমারিতে হেরে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধ থেকে বাদ পড়ে যান।

নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ভুটানকে নতুন করে গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়