নুসরাত জাহান
কোরআনুল কারিমে আমানত শব্দটিকে যে তিনটি শব্দে ব্যবহার করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে এক প্রকার হল, ‘আফত’ অর্থাৎ পবিত্রতা। যাকে উর্দু পরিভাষায় ‘আফত ওয়া পাকদামানি’ অর্থাৎ পবিত্রতা শব্দে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেননা মুফাসসির ইবনে জাওযিসহ অন্যান্য মুফাসসিরদের একটি ব্যাখ্য হল, ‘আফত’ শব্দটি আমানতের তৃতীয় অর্থ। যা কোরআনুল কারিমে ‘আফত’ শব্দ দ্বারাই এসেছে। এর দ্বারা আমানতের অর্থ নেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বর্ণনায় এসেছে, ‘নিশ্চয় আপনি যে গোলাম রেখেছেন সে শক্তিশালী ও আমানতদার। এ আয়াতে আমানতদার বুঝাতে ‘আমিন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আয়াতটি মুসা (আ.) সংক্রান্ত।
আয়াতে মুসা (আ.) এর যে বিশেষ গুণ উল্লেখ করেছে তা হল, শক্তিশালী ও আমানতদার। যে গোলামের মধ্যে এই গুণাবলি পাওয়া যাবে তাকেই চাকর হিসাবে রাখা উচিত। হযরত শুয়াইব (আ.) কে যখন তার কন্যা এই পরামর্শ দিল তখন শুয়াইব (আ.) জিজ্ঞাস করলেন, তোমার তার শক্তিমত্বা ও আমানতদারি সম্পর্কে কি জানা আছে? তার মেয়ে বলল, সে কূপের ওপর থেকে এমন পাথর একাকি উঠিয়ে ফেলেছে যাকে দশজনের কম লোক উঠাতে পারবে না। তাঁর আমানতদারি সম্পর্কে আমার জানা হল যে, যখন আমি তাকে ডাকার জন্য যাই এবং আমি আপনার সংবাদ তাকে দিই সে তা গ্রহণ করে চলতে থাকে। আমি তার সামনে সামনে চলি যাতে করে তাকে পথ দেখাতে পারি। কিন্তু সে আমাকে বললÑ ‘তুমি আমার পিছনে চল। যদি আমি ভুল পথে চলি তখন তুমি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। যাতে আমি সঠিক পথে চলে আসতে পারি।’ [তাফসিরুল মুনির]। কিছু বর্ণনায় রয়েছে যে শুয়াইবকন্যা বলেন, যখন আমি তার নিকট পৌঁছলাম তখন দৃষ্টি অবনত করে ফেলল এবং দৃষ্টি উঠিয়ে আমার দিকে পর্যন্ত তাকায়নি।
এই পুরো ঘটনার বর্ণনায় বুঝা যায়, লজ্জাস্থান হেফাজতও আমানতদারি। যার হেফাজতরে জন্য চোখের হেফাজত অত্যাবশ্যকীয়। কেননা এই ইজ্জতসম্ভ্রম হেফাজতের জন্য হযরত মুসা (আ.) তার বিয়েতে মহরের বিনিময়ে ১০ বছর ছাগল চড়িয়ে ছিলেন। কোরআনুল কারিমে সুরা কেসাসে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত উতবা ইবনে আল মনযির আস সালামি বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.) এর খেদমতে ছিলাম। তিনি তখন ত্ব সিন মিম অর্থাৎ সুরা কেসাস তেলাওয়াত করতে করতে যখন মুসা (আ.) এর ঘটনায় পৌঁছলেন ইরশাদ করেন, ‘নি:সন্দেহে হযরত মুসা (আ.) নিজের পবিত্রতা ও নিজের পেটের ক্ষুধা মিটানোর জন্য ৮/১০ বছর চাকরি করেন এবং কার চাকরি করেন? শ্বশুরালয়ের। আজ কালের স্বামীদের তো শ্বশুরালয়ের চাকরি চিন্তাও করা যায় না।’
হাদিসেও পবিত্রতা ও আত্মসংযমের গুরুত্ব কয়েক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যার দ্বারা বুঝা যায় পবিত্রতাও আমানতের অন্তর্ভূক্ত। এটাও ঈমানের এক অংশ। যা পূর্ণ করা একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা যবানের হেফাজতের পাশাপাশি লজ্জাস্থানের হেফাজতের ওপর জান্নাতের ওয়াদা নবুওয়াতি যবান দ্বারা করা হয়েছে। নবী কারিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের যবান ও দুই রানের মধ্যভাগের হেফাজত করবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদারি নিয়ে নিচ্ছি (বুখারি)।
আপনার মতামত লিখুন :