মতিনুজ্জামান মিটু : দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আমদানি করেই মেটাতে হয় দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি করা হয় প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন তৈল জাতীয় ফসল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বারি) এর তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। চাহিদার এক তৃতীয়াংশের মতো পূরন হয় দেশে উৎপাদিত তেলে এবং বাকীটা আমদানিতে মেটানো হয়। দেশে তেলের ঘাটতি রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ। বিগত মৌসুমে দেশে উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন তৈল জাতীয় ফসল। এতেউৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল।
আমাদের দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমূখী প্রভৃতির চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানোনো হয়। এখানে উৎপাদিত বাদাম দেশের মানুষ ভেজে খায় এবং বেকারিতে ব্যবহার করে।
দেশে ক্রমাগত তেল ফসলের জমি কমলেও ফলন বেশি হওয়ায় উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে দেশে আবাদী জমির মাত্র ৪ ভাগে তৈল ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। দেশে উৎপাদিত যে সামান্য পরিমাণ সয়াবিন হয় তা দিয়ে খৈল তৈরী করে মূরগী এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমদানী করা সয়াবিন থেকেও তৈরী করা হয় খৈল। সুটকির বিকল্প এই খৈল পোল্ট্রি এবং মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রধানত এই জন্যেই দেশে সয়াবিন আমদানী করা হয়। সয়াবিন থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তেল তৈরী হয়। যা আমরা খাই।
সরিষায় ৪০ ভাগ এবং সয়াবিনে ১৮ ভাগ তেল থাকে। তরকারি রান্নায় সরিষায় তেল খুব সামান্যই লাগে। অথচ আমাদের দেশের মানুষ তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি সয়াবিন তেল ব্যবহার করে। এছাড়া সিঙ্গাড়া, পুরি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ ইত্যাদিতেও দেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার বেড়েছে। যা আগে ছিলনা। পুষ্টিবিদদের মতে জনপ্রতি দিনে ৩৫ গ্রাম তেল খাওয়া উচিত। তবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন উল্টো কথা। তাদের মতে হৃদযন্ত্রের সুস্থ্যতায় তেল কম খাওয়া দরকার।
আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে দেশকে তৈল ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য চলছে গবেষণা। বারি’র তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র দেশের ৮টি গুরুত্বপূর্ণ তেল ফসলের ওপর গবেষণা চালিয়ে এযাবত ৪৩টি তৈল বীজের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে উচ্চফলনশীল সরিষার ১৮টি, চীনাবাদামের ১১টি, তিলের ৪টি, সয়াবিনের ৬টি, সূর্যমূখির ২টি এবং তিসি, গর্জন, তিল ও কুসুম ফুলের ১টি করে জাত। এর মধ্যে গত ১০ বছরে উদ্ভাবন করা হয় ৬টি জাত। এগুলো হচ্ছে; বারি সরিষা ১৬, ১৭ ও ১৮ এবং বারি তিল ৪, বারি সয়াবিন ৬ ও বারি চীনাবাদাম ১০। সম্পাদনা শাহীন চৌধুরী।
আপনার মতামত লিখুন :