সাব্বির আহমেদ : দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে জোটের ভাবনার বিষয়টি কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি মানা না হলে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান কি হবে- জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা।কূটনীতিকরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বাদে সরকার অন্য সকল দাবি মেনে নিলে আপনারা (ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচনে যাবেন কি? জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দাবিই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা। বিষয়টি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে থাকা নাগরিক ঐক্যের এক কেন্দ্রীয় নেতা।
তিনি জানান, বৈঠকের শুরুতেই ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের স্বাগত জানান। পরে তিনি নিজেই ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা ও এগারো লক্ষ্যের একটি কপি সবার হাতে তুলে দেন। লিখিত ওই কপিটি কামাল হোসেন পড়ে শুনান। এরপরই শুরু হয় মূল আলোচনা।
ওই নেতা জানান, একে একে আমাদের সকল দাবি নিয়ে কথা বলেন কূটনীতিকরা। দাবিগুলো কেন ঐক্যফ্রন্ট যৌক্তিক মনে করছে-তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন কুটনৈতিকরা। ১১ টি লক্ষ্যগুলো কোন ভিত্তিতে করা হয়েছে, কামাল হোসেনের কাছে জানতে চেয়েছেন। তবে সকল বিষয়ে তারা ইতিবাচক ছিলেন। কূটনীতিকরাও চান, বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কুটনৈতিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন জানান, 'নির্বাচনে আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা দরকার। নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্যতম শর্ত সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ।আমরা সকল রাজবন্দিদের মুক্তি চাই'।
জানা যায়, ২৫ টি দেশের প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও কথা বলেছেন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপানসহ আট দেশের প্রতিনিধি। তারাই সকল প্রশ্ন করেছেন ও জবাব চেয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সকল নেতা উপস্থিত থাকলেও কথা বলেন শুধু কামাল হোসেন। অন্যরা শুধু শুনেছেন। বৈঠকে ভারতের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে কে তাদের প্রধান হবেন- জানতে চেয়েছেন কুটনৈতিকরা। জবাবে ড.কামাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদ সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।
দুই ঘন্টাব্যাপী চলা ওই বৈঠকে থেকে বেরিয়ে কোনও কুটনৈতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
কূটনীতিকদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। সেখানে অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার আবার বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
এর আগে বিকেল সোয়া ৩টায় রাজধানীর একটি হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চা চক্র শুরু হয়। মাঝে ছোট্ট একটি বিরতে দিয়ে চলে ওই বৈঠক।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইউএসএ, কাতার, ভিয়েতনাম, কানাডা, তুরস্ক, ফান্সসহ প্রায় ২৪ টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা ওই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যসহ ডজনখানেক শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :