কালের কন্ঠ : কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঝাটিয়াপাড়া বাজারে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি দখল করে নিয়েছেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। মাটি ভরাট করে এর ওপর মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেছে।
মার্কেট নির্মাণকারী মো. ইমাম হোসেন ঝাটিয়াপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। দখলকৃত জমিটি হলো একটি পানি নিষ্কাশনের ছোট খাল। প্রভাবশালী প্রথমে খালটিতে মাটি ফেলে ভরাট করেন। পরে মার্কেট নির্মাণকাজ শুরু করেন। স্থানীয়রা খালটি ভরাটের সময় বাধা দিলেও তিনি কারো কথা শোনেননি। পরে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সরকারি জমি থেকে ওই ভবন উচ্ছেদ করার জন্য বলেন। তবে ওই প্রভাবশালী বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে ভবন নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মালিকানাধীন ঝাটিয়াপাড়া মৌজার ৮৪৮ দাগে মোট ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। এটি ঝাটিয়াপাড়া বাজার ও ঝাটিয়াপাড়া গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট একটি খাল। এলাকার প্রভাবশালী ইমাম হোসেন দুই শতাংশ জমি দখল করে প্রথমে মাটি ভরাট করেন। পরে সেখানে থাকা তাঁর কিছু জমি ও দখলকৃত জমিতে মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করেন। দখলকারী এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কারো বাধা মানেননি।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১২ জন শ্রমিক দিয়ে নির্মাণাধীন মার্কেটটির কাজ চলছে বেশ দ্রুত গতিতে। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়ে গেছে। সে সময় এলাকাবাসী জানায়, প্রথমে তারা দখলকারীকে মৌখিকভাবে বাধা দিয়েছে, কিন্তু কোনো কথা না শুনেই কাজ শুরু করেন ইমাম হোসেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি বেশ কয়েকবার জানানো হলেও প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। যার ফলে নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়ে নিতে পেরেছেন দখলকারী।
উপজেলার ঝাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাফর আহমেদ, বেলাল হোসেন, কাজী ফারুক, রফিকুল ইসলাম বলেন, ছোট খালটি ঝাটিয়াপাড়া বাজার ও ঝাটিয়াপাড়া গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। এটি ভরাট করে দখল করে নেওয়ার ফলে তা বন্ধ হয়ে গেছে। যদি নির্মাণাধীন ওই ভবন অপসারণ করে খালের প্রবাহ স্বাভাবিক করা না হয় তাহলে ঝাটিয়াপাড়া গ্রামের অন্তত ৫০০ পরিবারকে সমস্যায় পড়তে হবে। এ ছাড়া বর্ষাকালে পানিবন্দি হয়ে পড়বে এই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ। তাই তাদের দাবি, ওই সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. ইমাম হোসেন বলেন, ‘সরকারি ওই ছোট খালটি ছিল আমাদের সম্পত্তির পেছনে। আমরা মাটি ভরাট করেছি এটা সত্য। তবে মার্কেট নির্মাণ করছি নিজেদের জায়গায়। এর পরও এসি ল্যান্ড এসে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। আমরা আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি এবং পানি চলাচলের জন্য ড্রেন নির্মাণের ব্যবস্থা করছি। এরপর আবারও কাজ শুরু করব।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গিয়ে সরকারি সম্পত্তি দখলের সত্যতা পেয়েছি। এরপর তাদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া সরকারি খাল থেকে মাটি অপসারণ এবং সরকারি সম্পত্তিতে থেকে ভবন অপসারণ করতে বলেছি। যদি এর পরও ওই ব্যক্তি নির্মাণকাজ শুরু করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :