শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:১১ দুপুর
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এনার্জি ড্রিংকসের মান নির্ধারণের নির্দেশ এনবিআরের

কালের কন্ঠ : এনার্জি ড্রিংকসের মান নির্ধারণ করা হবে না বলে বেশ আগেই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)-এর সফট ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ শাখা কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনার্জি ড্রিংকসের উৎপাদন, বিপণন এবং বিদেশ থেকে আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। নিষিদ্ধের বিষয়ে জনগণকে জানানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ঠিক এই মুহূর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিএসটিআইকে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজ জাতীয় পণ্যের মান নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনার্জি ড্রিংকসের নামে বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে তাতে মাদক জাতীয় বা যৌন উত্তেজক উপাদান ছাড়াও চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। এ ছাড়া এতে রয়েছে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এসব পানীয় পান করার ফলে মানুষের স্নায়ু, হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, লিভার, পাকস্থলী ও ফুসফুসে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, এনবিআর গতকাল বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি দিয়ে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজ জাতীয় পণ্যের মান নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে তরুণ প্রজন্মের কাছে এই পণ্যটি বেশ প্রিয়। রাজস্ব আহরণেরও একটি বড় খাত। এ খাত থেকে গত অর্থবছরে ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে। রাজস্ব আহরণ আরো বাড়াতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসের জন্য একটি শক্তিশালী কর কাঠামো প্রণয়ন করা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস জাতীয় পণ্যকে ভোক্তাসাধারণের কাছে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। কিন্তু মান নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিএসটিআই কর্তৃক এসব পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণ না করায় সাধারণ ভোক্তাদের যেমন প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আহরণও নানা ঝুঁকি ও আইনি জটিলতার সম্মুখীন হয়। এ জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এবং বেভারেজ খাত থেকে সঠিক রাজস্ব আহরণের স্বার্থে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজসহ সব বেভারেজ পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করছে এনবিআর। এর ভিত্তিতে স্থানীয় ভ্যাট আদায়যোগ্য করা হবে। এ জন্য এসব পণ্যের মান নির্ধারণের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাও জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিএফএসএর সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সময় হলেই আমরা আমাদের মতামত দেব। আমাদের বর্তমান যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী আমরা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি।’

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিএফএসএর গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কার্বোনেটেডে বেভারেজের নির্ধারিত মাত্রার (১৪৫ মিলিগ্রাম/লিটার) বেশি ক্যাফেইন-সমৃদ্ধ বেভারেজ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। দেশের সব ধরনের কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজ ‘বিডিএস ১১২৩:২০১৩’-এর মান ও বিধান মতে উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে, যেখানে ক্যাফেইনের মাত্রা সর্বোচ্চ ১৪৫ মিলিগ্রাম/লিটার সীমার মধ্যে থাকতে হবে। বাংলাদেশে এনার্জি ড্রিংক নামের কোনো কোমল পানীয়ের জাতীয় মান না থাকায় মোড়কে এসংক্রান্ত ঘোষণা বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক এবং বিএফএসএর বিধি প্রবিধানমালার পরিপন্থী। তাই এগুলোর মোড়কে এনার্জি ড্রিংক, শক্তিবর্ধক কিংবা এ জাতীয় কোনো সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এবং এ ধরনের শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

জানা গেছে, বিএফএসএ ইতিমধ্যে দেশের কাস্টম হাউসগুলোতে চিঠি দিয়ে এনার্জি ড্রিংকসের আমদানি বন্ধেরও নির্দেশনা দিয়েছে। এ কারণে সব ধরনের এনার্জি ড্রিংকস আমদানি এখন বন্ধ।

বিএফএসএর নির্দেশনার পর থেকেই এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদনকারী দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন থেকে সরে এসেছে। তারা পণ্যের গায়ে কার্বোনেটেড বেভারেজ লেখা শুরু করেছে। যাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে এনার্জি ড্রিংকস উল্লেখ ছিল সেগুলোও পরিবর্তন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে এনবিআরের এই চিঠি পুরো সিদ্ধান্তকেই আবার পাল্টে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উল্লেখ্য, দেশের বাজারে বেভারেজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কার্বোনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন করে আসছিল, যা পুরোপুধি অবৈধ ছিল। আবার এগুলো পরীক্ষা করে কয়েকটিতে উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইনের (১৪৫ মিলিগ্রাম/লিটারেরও দ্বিগুণ) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমদানি করা রেডবুলের গায়ে ঘোষণাই দেওয়া ছিল ৩২০ মিলিগ্রাম/লিটার ক্যাফেইনের। কোনো কোনো নন-ব্র্যান্ডেড এনার্জি ড্রিংকসে পরীক্ষায় পাওয়া গেছে ভায়াগ্রার উপাদান, যা যৌন উত্তেজক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এনার্জি ড্রিংকসগুলো কম বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে বেশ প্রিয়, কিন্তু তাদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বিধায় এর মান নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসটিআইয়ের সফট ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ শাখা কমিটি। এদিকে এর মান নির্ধারণ করা মানেই হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এনার্জি ড্রিংকসের নামে অনুমোদন নিয়ে পণ্য উৎপাদন করতে পারবে, যে সুযোগ এখন নেই।

বিএসটিআইয়ের এনার্জি ড্রিংকসের মান নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর যদি পুনরায় মান নির্ধারণের নির্দেশ দেয় সে ক্ষেত্রে বিএসটিআই কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে—কালের কণ্ঠের এমন প্রশ্ন ছিল প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সরদার আবুল কালামের কাছে। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত কমিটি রয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন এক্সপার্ট রয়েছেন। এনবিআরের চিঠি এখনো পাইনি। তবে পেলে নির্দিষ্ট কমিটির এক্সপার্টরা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এখনই বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়