শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:১১ সকাল
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ধর্মনিরপেক্ষতা’য় বিশ্বাসীর মুখে এ কী শুনি!

সামীউর রহমান শামীম : চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বলে বিবেচিত এই পুজো। এটি নিতান্ত সনাতন বা হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় উৎসব। দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাধীনভাবে এ ধর্মের অনুসারীরা এই উৎসব পালন করে আসছেন। প্রায় বছর এই উৎসব চলাকালীন সময়ে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি চেনা বুলি আওড়ে থাকেন–‘‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’ এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা সকলে জানি এবং জেনে এসেছি যে, হিন্দু ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এই ধর্মাবলম্বীরা তাদের আরাধ্যা ‘দুর্গা’ নাম্নী এক দেবীর পুজো করে থাকেন। এটি একান্ত তাদের আরাধনা বা উপাসনার বিষয়। আর এই উপাসনার অংশ হিসেবে তারা ‘দুর্গোৎসব’ বা ‘শারদোৎসব’ পালন করে থাকে। এই উৎসব তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের অংশ।

আমরা এও জানি যে, আমাদের দেশের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তার সরকারও এই নীতিতে বিশ্বাসী। সরকারের বক্তব্য অনুসারে দেশ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বা ‘Secularism’ নামক মতবাদের বিপক্ষে। কিন্তু এখানে আমার ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর নীতিকে প্রাধান্য দিয়েই কথা বলবো। বিবেচনা করবেন পাঠকবৃন্দ।

বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’র একটি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায়, তা বিস্তর আলোচনা। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র নই। নই আইনজ্ঞ বা সংবিধান বিশেষজ্ঞ। কোনো ধরণের রাজনীতির সাথে আমার কোনো সম্বন্ধ নেই। সাধারণভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে যা বুঝি, “The principle of separation of the state from religious institutions.” (অক্সফোর্ড লিভিং ডিকশোনারি)।

সোমবার বিকেলে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গোৎসবে গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। সেই সাথে তিনি তদস্থলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সরকার প্রধান হিসেবেই। আমরা যদি ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ বিষয়ে জানতে উইকিপিডিয়ায় নজর দিই, তবে দেখি, ‘‘এই মতবাদ অনুযায়ী, ‘‘সরকার কোনরূপ ধর্মীয় হস্তক্ষেপ করবে না, কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবে না এবং কোন ধর্মকে কোন প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করবে না।’’ অথচ তিনি সেখানে সরকার প্রধান হিসেবে গেছেন। বক্তব্য রেখেছেন। কোন হিসেবে তা বোধগম্য নয়৷

আমার আলোচ্য বিষয় মূলত তিনি মুখে যা বলেছেন তা নিয়ে। তাই তিনি কী হিসেবে গেছেন, তা নিয়ে কথা না বাড়ানোই কল্যাণকর। তিনি বলেছেন, ‘‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’ এই কথাটি তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঈদুল আযহায় কুরবানির উৎসবের সময় বলেছেন মর্মে কোনো মিডিয়ায় সংবাদ এসেছে বলে আমি জানি না। মুসলিমদের ‘ঈদ’ শব্দের অর্থ আনন্দ, সুখ, খুশির উৎসব। সে অর্থে ঈদ উৎসবও সকলের। ঈদুল আযহায় মুসলিমরা গরু কুরবানি দেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গো-হত্যার চূড়ান্ত বিপক্ষে। তারা গোমাংস ভক্ষণ করেন না। সেহেতু হিন্দু ধর্মের কেউ গরু জবাহ দেখতে এবং গোমাংস খেতে যাবে না নিঃসন্দেহে। অপরদিকে মুসলিমরা এক ও অন্যান্য দ্বিতীয় ঈশ্বরে বিশ্বাসী। উপাস্য, আরাধ্য কেবল একজন। তিনিই আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা ইসলামে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, অন্য কারো আরাধনা করা। সুতরাং কখনো কোনো মুসলিম পারে না সেথায় যেতে, যেথায় লোকেরা সবচেয়ে বড় পাপে লিপ্ত। হিন্দুরা গোমাংস যেমন খাবে না, মুসলিমরা পুজোর প্রসাদ খাবে না। সমগ্র হিন্দুজাতি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করবে, তদ্রূপ সকল মুসলিম তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করবে। এটিই সমাধান। কিন্তু মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীকে কখনো কুরবানির ঈদে হিন্দুসহ সকলের উৎসব আখ্যা দেয়ার কথা শোনা যায় না। যা কোনোভাবেই ধর্মনিরপেক্ষতার নিদর্শন বহন করে বলে মনে হয়না।

হিন্দুরা তাদের উৎসব স্বাধীনভাবে পালন করবে। এতে কোনো মুসলিম বাধা দেবে না। তারা সহনশীলতার পরিচয় বহন করবে। তেমনি মুসলিমরা যখন কুরবানি করে, তখন হিন্দুরা সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে। এটিই অসাম্প্রদায়িকতা। নিজেকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে কোনো মুসলিমকে পুজোয় উপস্থিত হতে হবে বা পুজোকে নিজের উৎসব ভাবতে হবে–এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কথা।

শেষে একটি দৃষ্টান্ত দিতে চাই। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডৌ ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলিমদের শুভেচ্ছে জানিয়েছিলেন। তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, নিজে ও নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুভেচ্ছা জানাননি। তিনি বলেছিলেন

“On behalf of our family, Sophie and I wish all those observing Eid al-Adha a wonderful celebration. “Eid Mubarak!”

অর্থাৎ ‘‘আমার পরিবারের পক্ষ হতে আমি ও সোফিয়া (স্ত্রী) যারা ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, সুন্দরভাবে উদযাপিত হোক। ঈদ মুবারাক।’’

লক্ষণীয় কানাডার প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের, যারা ঈদুল আযহা উদযাপন করছে। ব্যাপারটি বুঝলে এতো কথা বলতে হতো না।

ইনসাফ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়