শাকিল আহমেদ: পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ১৯৯২ সালের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য বিভাগে তালা দেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকার পর নিজেরাই আবার তালা খুলে দেয়। বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি বলছেন সংস্থার সচিব শাহাবুদ্দিন খান।
এ সময় আন্দোলনকারীরা আদেশ জারির প্রতিবাদে ও সচিবের বদলির দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। তারা প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তার রুমসহ বর্জ্য বিভাগের সকল রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়। অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলামকে রুম থেকে বের করে দিয়ে তালা দিলে তিনি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান। এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু সাচিবিক দফতর থেকে করা হবে, তাহলে বর্জ্য বিভাগের কি দরকার? তাই তালা মেরে দিয়েছি।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর পরিচ্ছন্নতা কাজের সার্বিক মান উন্নয়ন এবং পরিচ্ছন্নতা কাজ ব্যবস্থাপনা জন্য ১৯৯২ সালের ১০ জুন একটি আদেশ জারি করেছিলো তৎকালীন সিটি করপোরেশন। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুরণো আইনটি বাতিল করে ডিএসসিসি। একইসাথে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর নতুন আদেশ জারি করা হয়।
পুরণো আইনে বলা হয়েছিলো, আঞ্চলিক কার্যালয়ের সকল স্তরের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তরা প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার অধীনে নিয়োজিত থাকবে। ‘তিনি’ তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম তদারকী ও নিয়ন্ত্রণ করবেন। এছাড়া কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, মাসিক বেতন-বিলসহ অন্যান্য বিল প্রস্তুত করা, অনুপস্থিত ক্লিনারদের স্থলে ঠিকা ভিত্তিক ক্লিনার নিয়োগ ও বেতনাদি পরিশোধ করবেন। এতে আরো বলা হয়েছিলো, ঢাকা মহা নগরীর পরিচ্ছন্নতা কাজের সামগ্রিক সফলতা-বিফলতা ইত্যাদিও সার্বিক দায়-দায়িত্ব প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার উপর বর্তাবে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে সারাসরি দায়বদ্ধ থাকবেন। দীর্ঘ ২৬ বছর এই আদেশেই চলছিলো ডিএসসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
তবে নতুন জারি করা আইনে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্ব কমিটির মাধ্যমে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, সহকারী সচিব সংস্থাপন শাখা-৩ এবং সদস্য সচিব হিসাবে থাকবেন করপোরেশনের সচিব। নতুন আদেশে আরো বলা হয়, বর্ণিত কমিটি অনুপস্থিত বা মৃত্যু জনিত কারণে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শুন্য হলে তদস্থলে তাদের ওয়ারিশান কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনপত্র ও কাগজপত্রাদি যাছাই-বাছাই করে প্রকৃত ওয়ারিশকে সাচিবিক দপ্তরের মাধ্যমে ঠিকা ভিত্তিক নিয়োজিত করণের লক্ষ্যে সুপারিশ করবেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে স্ক্যাভেঞ্জার্স এন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আগের আদেশ অনুযায়ী আমরা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলাম। সবকিছু এখান থেকেই হতো। কিন্তু সচিব দফতরে নেওয়ার কারণে আমাদের বেতন-ভাতা পেতে ভোগান্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই আদেশ বাতিলের জন্য আমরা আন্দোলন করছি।
ডিএসসিসির সচিব শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নতুন আদেশে ঝামেলার কিছু নাই। তারা অহেতুক আন্দোলন করছে। ৩১৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর মধ্যে ৩৮ জনের কোন কাগজ-পত্রই নাই। তারা ৩ মাস সময় পেলেও কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। এজন্য তাদেরকে কর্ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমিতো আদেশ জারি করার কেউ না। এখানে কর্তৃপক্ষ আছে তারা বিষয়টি দেখবে।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অনেক দাবী দাওয়া আছে। এ জন্য তারা এসেছিলো। এরপর আমি মিটিং এ চলে গেছি। এবিষয় তাদের সাথে আলোচনা চলছে দুই একদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
সম্পাদনায়: আবু বকর
আপনার মতামত লিখুন :