মানবজমিন : সংসদ বহাল রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বর্তমান এমপিদের অবস্থান কী হবে তা জানতে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়ে তফসিলের আগে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না সাংবিধানিক সংস্থাটি। গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, তফসিলের পর সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে সকালে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসি’র মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে মাঠ পর্যায়ে কোনো বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর জানতে পারবো সরকারের অবস্থান কী থাকবে, এমপিদের অবস্থান কী থাকবে।
এটা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা দেখি সরকার এমপিদের কীভাবে রাখে। আচরণবিধির কিছু কিছু পরিবর্তন হবে।
কিছুদিন পর আইন সংস্কার কমিটির মিটিংয়ে এসব নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এমপিদের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আচরণবিধি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান সিইসি। ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সভা বর্জনের প্রসঙ্গ আসে। এবিষয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিইসি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ৫ দফা প্রস্তাব তৈরি করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গত সোমবার নির্বাচন কমিশনারদের সভায় ওই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে না দেয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি দিয়ে তা বর্জন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সভা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে তা বর্জন করেন এই নির্বাচন কমিশনার। ‘নোট অব ডিসেন্টে’ মাহবুব তালুকদার লেখেন, বাকস্বাধীনতা ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন
কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না।
তিনি বলেন, এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ কমিশনের সভা বর্জন করছি। মাহবুব তালুকদার তার বক্তব্যে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন নিয়ে সংলাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। প্রায় দেড় মাস পর গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের সভা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তফসিল নিয়ে সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে ছাড়াই আলোচনা হয়েছে। এর আগে গত ৩০শে আগস্ট নির্বাচন কমিশনের সভায় আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে আপত্তি দিয়ে সভা ত্যাগ করেন মাহবুব তালুকদার। এ ছাড়া সম্প্রতি কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিইসি ও অন্য চার কমিশনারের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার কাজ কঠিন হবে না বলে মন্তব্য করেন সিইসি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গতদিন এটা হয়ে গেছে। আজকে আর আমি এটা আনবো না। ওটা নিয়ে আপনাদের পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, প্রচার হয়েছে। আই ডোন্ট লাইক টু গো ব্যাক।’ তাহলে কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কথাগুলো সত্য কিনা?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে আর ইনসিস্ট করবেন না। আমি আর কথা বলবো না।
সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্রসহ তিন চারটি বিষয়ে তারা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি সন্তোষজনক। কোথায়, কীভাবে নির্বাচন সামগ্রী নেয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন। এর আগে সকালে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ক নির্দেশনা প্রদান করেন সিইসি। অনুষ্ঠানে নূরুল হুদা বলেন, সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নিরপেক্ষভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা আমরা করবো। সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় সমগ্র জাতি একটা আবহ তৈরি করেন। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়। ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলা, সুশীল সমাজের পরামর্শ গ্রহণ করা, অন্য অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং আপনাদের বুদ্ধি-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে প্রত্যাশিত নির্বাচনটি আপনারা জাতিকে উপহার দেবেন।
আপনার মতামত লিখুন :