শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘ফোনালাপ ফাঁস’ ইজ ব্যাক

যায়নুদ্দিন সানী : দেশের রাজনীতি বেশ অনেকদিন ধরেই, ‘কি হয় কি হয়’ ভাব নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঐক্য প্রক্রিয়া আদৌ কোনো ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারবে কি না, ফেললে কতোটা ফেলবে, আওয়ামীরা কীভাবে মোকাবেলা করবে, এসব নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনাই বাজারে চলছিল। আজ সেই প্রত্যাশায়, দুটো ঘটনা যোগ হয়। সংবাদ সম্মেলন কিংবা ভাঙন এক্সপেক্টেড ছিলো কারও কারও কাছে। তবে আই ওয়াজ ওয়েটিং ফর ‘ফোনালাপ ফাঁস’। বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন ট্রিক। অ্যান্ড টুডে, ইট কেম। অনেস্টলি স্পিকিং, জোট নিয়ে আমি খুব উৎসাহীও না। আবার তাদের একেবারে বাতিল করার পক্ষেও না। উনাদেরকে ‘হট ফেভারিট’ এখনো কেউ বলছে না। কমবেশি সবাই, ‘ডার্ক হর্স’ বলতে চাইছে, তবে আমি এই মুহূর্তে কোনো টাইটেল দেয়ার পক্ষে না। বলতে পারেন, ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ মুডে আছি। ভানুর কৌতুকের মতো, ‘দেখি না ব্যাটা কি করে’। টাইপ।

প্রথমে আমার ধারণা ছিলো, খেলাটা আওয়ামীরাই খেলছে। স্পেশালি যখন, ‘বিএনপি আসতে পারে কিন্তু জামায়াত না’ এমন একটা স্ট্যান্ড নিয়েছিল ঐক্য। এমন একটা ইম্প্রেশান দেয়ার চেষ্টা করছিল, ‘যেন শর্তফর্ত মেনে যদি জোটে আসো, তাহলে গদিতে বসতে পারবা, ভেবে দেখো।’ তাই মনে হয়েছিল, এটা বিএনপি জামায়াত ভাঙনের একটা প্ল্যান হলেও হতে পারে। স্পেশালি, বিএনপির যেভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তখন এমন শর্ত দেয়াই যায়। পরে মনে হয়েছে, হয়তো সত্যি সত্যিই তারা জোট করতে চাইছেন। তারা ড. কামাল হোসেনের মতো একটা ফেসকে সামনে রাখবার সুযোগটা নিতে চাইছে। আবার কখনো মনে হয়েছে, বিএনপির ঘাড়ে চেপে কামাল সাহেব প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এখন মনে হচ্ছে, সবগুলোর সম্ভাবনাই আছে।

তবে জোটের স্ট্রাকচারের দিকে যখন তাকাচ্ছিলাম, তখন যে ব্যাপারটা মাথায় স্ট্রাইক করছিলো, তা হচ্ছে, ‘এক ঘারমে দো পীর’- এর রিয়াকশান কখন হবে। একসাথে এমন কয়জন নেতা এক হয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অরিজিনাল দল ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। যাদের ইগো বেশ মারাত্মক টাইপের। একজন একবার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, একজন সংবিধান প্রণেতাদের একজন। সো, ক্ল্যাশ অবশ্যম্ভাবী। এটা উনারা নিজেরা জানেন। আর তেমনটা হলে, উনাদের প্রতি বিশ্বাসের বারোটা বাজবে, সেটাও অজানা না। অ্যাভয়েড করতে চেষ্টা হয়ত তারা করবেন, কিন্তু তা করতে পারবেন কি না, কিংবা, করা জরুরি মনে করবেন কি না, সেটাই ছিল প্রশ্ন। আজকে সেটার কিছু উত্তর জনগণ পেয়ে গেছে।

১৩ অক্টোবর, আরও কিছু ব্যাপার ক্লিয়ার হলো। থ্যাংকস টু ফোনালাপ ফাঁস এবং সংবাদ সম্মেলন এবং কাউন্টার সংবাদ সম্মেলন। জানা গেল মান্না সাহেব ট্রায়িং টু কিপ দ্য জোট ইন্ট্যাক্ট। অন্যরা এতে বাঁধ সাধছেন। ফোনালাপে মাহী সাহেব বেশ বড় বড় গাল-গপ্প দিলেন। আর একটি সন্দেহ বাজারে চালু করে দিলেন, ফোনালাপ ফাঁসের হোতা তিনি। তার পিতাকে বাদ দেয়াকে তিনি ‘পেছন থেকে ছুরি মারা’ ভেবেছেন আর তাই কাউন্টার হিসেবে তিনি শুরু করলেন ‘পেছন থেকে ছুরি মারার’ দ্বিতীয় পর্ব। এই মুহূর্তের বটমলাইন হচ্ছে, আপাতত জোট থেকে মাহী অ্যান্ড গং আউট। আওয়ামীরা খুশি বাট, মুখে কিছু বলছে না। তবে ঘটনাটা আরও পরে ঘটলে, আওয়ামীদের জন্য বেটার হতো। তখন জোট আরেকটু বড় ধাক্কা খেত। স্টিল, ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’।

আরেকটা ব্যাপার নিয়ে একটু বলে শেষ করবো। ফোনালাপ কিংবা সংবাদ সম্মেলন, দুটো থেকে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার হলো না, আর তা হচ্ছে, ভাঙনটা কেন? তাত্ত্বিক যে বক্তব্য জনগণের জন্য দেয়া হচ্ছে, সেটা যে আসল কারণ না, তা বোঝাই যাচ্ছে। ‘সামনা সামনি কথা বলবো’ সেইড ইট অল। পরিষ্কার করে কোনো রাজনৈতিক নেতাই বলবেন না। আর তেমনটা হলে জনগণ যা ভাববে, তা হচ্ছে এটা একটা ‘হালুয়া রুটির ভাগ বাটোয়ারা’ কেস।

গেস ওয়ার্কের জন্য একটা ক্লু সেখানে দেয়া ছিল। ‘ভাগ বাটোয়ারার’ ফর্মুলায় কামাল সাহেবের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দ। অন্যদের জন্য কি কি? বদরুদ্দোজা সাহেবের জন্য কি ছিল? সেটাই কি কামড়াকামড়ির মূল কারণ? না দেড়শ আসন মার্কা গপ্প? না জামায়াত? এটা, আই থিঙ্ক পরের ফোনালাপে কিংবা পরের কাউন্টার সংবাদ সম্মেলনে ক্লিয়ার হবে। তাহলে, গল্পের সারাংশ কি দাঁড়ালো? ফোনালাপ কি তার পারপাস সার্ভ করলো? না ব্যাকফায়ার করলো? ফোনালাপ ফাঁস এটাই কি শেষ? না আরও আসছে? যাইহোক, মান্না সাহেব আগের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেননি বলেই মনে হচ্ছে। এবার কি নেবেন? এবার যদি নেন, তাহলে প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, পরের ফোনালাপ ফাঁসটা কার হবে? সেটা কে লিক করবে? সেটা কি ব্যাকস্ট্যাবিং পার্ট টু হবে?

আগামীতে কি হবে, জানি না। তবে সরকারি এবং বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের একটা ব্যাপার বোঝার সময় হয়ে এসেছে, আর তা হচ্ছে ব্যাপারটা নৈতিক হোক আর অনৈতিক, ‘ফোনালাপ ফাঁস’ একটি অন্যতম পলিটিক্যাল উইপন। এটা ব্যাবহার করতে কেউই পিছপা হবে না। প্রতিপক্ষের ক্ষতি করতে পারলে, সবাই এটা ব্যবহার করবে। কাজটা ভালো না খারাপ, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে এটা ঠিক, রাজনীতিবিদরা যে ভণ্ড, তা ফাঁস করার জন্য এমন ফোনালাপ আরও আরও আসা জরুরি। আমি এই উইপনের পক্ষে। সো, ডিয়ার পলিটিশিয়ানস, বি কেয়ারফুল বিকজ ইট ইজ ব্যাক।

লেখক : কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়