মো:সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : মসজিদ , মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং মন্দিরের নাম করে প্রকল্প দেখিয়ে লাখ-লাখ টাকার জি আর (গ্রাচ্যুয়েটি রিলিফ) চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
একটি প্রতারক চক্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়ে এই চাল উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ওই টাকা পকেটস্থ করেছে। এ ঘটনা ঘটেছে জেলা বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায়।
অভিযোগে জানা যায়, জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার পূর্ব বনগাঁও জামে মসজিদে ইছালে ছওয়াব (ওয়াজ মাহফিল) দেখিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। কাগজে প্রকল্প দেখিয়ে এই মসজিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আগতদের ভোজনের জন্য ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ২ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়। কিন্তু চাল বরাদ্দের বিষয়টি জানে না মসজিদ পরিচালনা কমিটি। মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউপি মেম্বার রুহুল আমিন বলেন এ বছর ওই মসজিদে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়নি।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন ”সরকারি চাল খেকো গ্রুপ’ তার এলাকার তরুণ সংঘ সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম করে বিশেষ বরাদ্দের লাখ-লাখ টাকার চাল আত্মসাৎ করে। একই উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া পূর্বপাড়া জামে মসজিদে ইছালে ছওয়াব দেখিয়ে ২ মেট্রিক টন জি আর চাল তোলা হয়। তবে মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সেকেন্দার আলী ও মহির উদ্দিন বলেন, চাল বরাদ্দ হয়েছে কিনা এ বিষয় মসজিদ কমিটি জানে না।
তা’ ছাড়া এ মসজিদে এবার ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান হয়নি। পার্শ্ববতী করনাইট জামে মসজিদে এ বছর ওয়াজ মাহফিল হয়নি বলে জানায় স্থানীয়রা। এই মসজিদের নাম করে ২ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদ পরিচালনা কমিটি তা’ জানে না। ওই এলাকার করনাইট এতিম খানা ও লিল্লাহ্ বোডির্ংয়ে ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়।এ প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধায়ক মাওলানা শরিফুল ইসলাম বলেন এক ব্যক্তি আমাদের ২০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু কিসের টাকা আমরা জানি না।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের ধামগানি কলন্দাকরিয়া এতিম খানা ও মাদ্রাসায় ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয় হয়। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য পবার আলী বলেন ২ মেট্রিক টন চালের পরিবর্তে মাদ্রাসা ২৫ হাজার টাকা পায়। বাকি টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে নেয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়নি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে জি আর চাল বিক্রির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গী সহ জেলার অন্য উপজেলায় ।
জেলা প্রশাসকের ত্রাণশাখা সুত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী কর্মসুচির আওতায় এ বছর জুনে বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, হরিপুর পীরগঞ্জসহ ৫ উপজেলায় উপজেলার মসজিদ , মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং মন্দির ,র্গীজায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আগতদের খাবারের (আহার্য)জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের ৩শ’ তিন মেট্রিক টন জি আর চাল উপ-বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে জি আর ( গ্রাচ্যুয়েটি রিলিফ ) চাল বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করে বিভিন্ন ধমীর্য় প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে প্রতারক চক্রটি। দরখাস্ত জেলা প্রশাসকের টেবিল হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সচিবের দপ্তরে পৌছে। আবেদন মঞ্জুর হয়ে অনুমতি পত্র জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আসে। পরে জেলা প্রশাসক ওই অনুমতি পত্র উপজেলা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী অফিসার কে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের পর পি.আই.ও কে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে জি. আর চাল বরাদ্দের ডিও দেয়ার নির্দেশ দেন।
এই আদেশ পত্র খাদ্য বিভাগে পৌছার পর আবেদন কারী প্রতিষ্ঠান কে প্রকল্পের চাল প্রদান করে গুদাম কর্মকর্তা। প্রতারক চক্রটি জি আর চাল উত্তোলন করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয় প্রতিষ্ঠান কে না জানিয়ে । কোন প্রতিষ্ঠান ঘটনা জেনে গেলে তাদের নাম মাত্র টাকা দেয় । বাকি টাকা অফিস খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করে । এই টাকার ভাগ নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ উপরের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা বলে জানিয়েছে প্রতারক চক্রের এক সদস্য ।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি, তথ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :