শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:২৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১০:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসায়ী

সমকাল: থানায় নিয়ে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জাহিদুল ইসলাম স্বপন নামে এক ব্যবসায়ী। গত ১১ অক্টোবর আদালতে এ মামলা দায়েরের পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। স্বপনের অভিযোগ, তার বাড়িতে অপরিচিত লোক পাঠিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন ওসি। তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার ভয় দেখাচ্ছেন। এ জন্য তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে স্বপনকে বাড়ি থেকে থানায় ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ওসি ও এসআইর বিরুদ্ধে ওই ব্যবসায়ীর করা মামলায় আদালতের আদেশের কপি গতকাল সোমবার পর্যন্ত তারা পাননি। ব্যবসায়ী স্বপন নিজের নিরাপত্তা চেয়ে কোনো আবেদনও পুলিশ সুপারের কাছে করেননি। বিষয়টি তার জানাও নেই। সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলমও তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম স্বপন সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের গোহাট্টা গ্রামের বাসিন্দা। ঠিকাদারি ব্যবসা করেন তিনি।

মোবাইল ফোনে স্বপন বলেন, উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় প্রায় আট কোটি টাকা মূল্যের দেড় একর জমি নিয়ে এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। ওসি মোরশেদ ও এসআই সাধন ওই শিল্প মালিকের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ৭ অক্টোবর রাতে বিরোধপূর্ণ জমির বাড়ি থেকে তাকে এবং আনিছুর রহমানসহ তার দুই আত্মীয়কে থানায় নিয়ে যান। পরে থানায় আটকে রেখে ওই জমির দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় স্বপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। এ ঘটনায় স্বপন ওসি মোরশেদ আলম, এসআই সাধান বসাককে আসামি করে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদলতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এএসপি পদমর্যার্দার নিচে নন, এমন কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।

এদিকে স্বপনকে থানায় আটকে রেখে মারধরের ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ এসেছে। ১৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে স্বপন ও তার দুই আত্মীয়কে বাড়ি থেকে ধরে নেওয়া, ওসির সঙ্গে মোবাইল ফোনে এসআই সাধনের কথা বলা ও দিকনির্দেশনা নেওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এ ছাড়া থানায় নিয়ে স্বপন ও আত্মীয়দের নাম-ঠিকানা রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে স্বপনকে একটি কক্ষে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করা হয়। এ সময় স্বপনকে উদ্দেশ করে ওসি মোরশেদকে বলতে শোনা যায়, 'তোকে এখন কোন বাপ বাঁচাবে?' এসআই সাধন বলেন, স্বপনকে দেওয়া ওই জমির পাওয়ার ছুটিয়ে দেওয়া হবে। এ কথা বলে ওসি ও এসআইকে হাসাহাসি করতে শোনা যায়। পরে এসআই ওই ব্যবসায়ীকে হাত সোজা করতে বলেন এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি দেওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় স্বপনকে 'মাগো মাগো' বলে চিৎকার করতে শোনা যায়। পরে স্বপনের আত্মীয় আনিছুরকে ওই কক্ষ থেকে বের করে থানার জেলখানায় ঢোকানো হয়। এ সময় তার শরীর তল্লাশি করে মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে বলে একজন কনস্টেবল পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বলেন। ওই কর্মকর্তা তাকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে আসার জন্য বলেন। ওই সময় পর্যন্ত থানার ভেতরে যা ঘটেছে সবই অডিও রেকর্ডে রয়েছে।

স্বপনের দাবি, আনিছুরকে জেলখানায় ঢোকানোর পর স্বপনকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে ওসি কাঠের রুল দিয়ে বেধড়ক পেটান। একপর্যায়ে স্বপন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে জ্ঞান ফিরলে পুনরায় তাকে থানায় নিয়ে এসআই সাধন আবারও লাঠি দিয়ে পেটান। পরদিন বিকেলে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর জিম্মায় সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে স্বপন ও তার দুই আত্মীয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, মামলার বিষয়ে আদালতের আদেশের কপি তাদের কাছে পৌঁছলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

ওসি মোরশেদ আলম হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'যারা থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে তাদের ভয়ভীতি দেখাব আমি?' ভয়ের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বপনের পালিয়ে বেড়ানোর অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি করেন ওসি।

এদিকে ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সোনারগাঁ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশ। রোববার সোনারগাঁ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ে উপজেলা শাখার কমিউনিটি পুলিশিং সভার মধ্য সময়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়