সুব্রত তালুকদার : ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাত নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভি রুমের ছাদ ধসে ৩৯ জন নিহত হন। নিহতের মধ্যে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ১৫ জন কর্মচারী ও অতিথি ছিলেন। ১৯৮৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশ টেলিভিশনে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক শুকতারা দেখছিলেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই ধসে পড়ে টিভি রুমের দুর্বল ছাদ। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৩৮ জন। পরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ জনে।
জগন্নাথ হলের ধসে পড়া ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯২১ সালে। ১৯৮৫ সালে ভেঙে পড়ার আগেই এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ হলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সংখ্যালঘু ছাত্রদের হল। তাই এ হলে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ ছিল। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাত পৌনে নয়টায় দুর্গাপূজার ছুটিতে পরদিন বাড়ি যাবে এমন ৩৯ ছাত্র, দর্শনার্থী এবং কর্মচারীকে এখানে প্রাণ হারাতে হয়। সেই সঙ্গে মারাত্মক আহত হয় আরও প্রায় ৩০০ জন। হঠাৎ ভয়ংকর নারকীয় অবস্থা। মুহূর্তে টিভি রুমটি এক ধ্বংস স্তুপ। বৃষ্টির জলে মেরামতাধীন ৬৪ বছরের পুরনো চুন-সুড়কির ছাদ ভেঙ্গে গেল। ইট, লোহা ও কাঠের গরাদসহ চুন সুড়কির স্তূপে চাপা পড়ে অমূল্য প্রাণ।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এই সংবাদ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। দ্রুত উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন অন্যান্য হলের ছাত্র-ছাত্রীরা। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার সকল হাসপাতালের সামনে রক্ত দাতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সমস্ত ঢাকার মানুষ ছুটে আসেন জগন্নাথ হলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসাবে আমি সে সময় জগন্নাথ হলের একজন আবাসিক ছাত্র ছিলাম এবং সেদিনও যথারীতি অন্যদের মত জগন্নাথ হলেই অবস্থান করছিলাম। ঘটনার পর হতে একটানা তিনদিন বিরামহীন উদ্ধার, চিকিৎসা সহায়তা ও মৃতদেহ মৃতদের বাড়ি পৌঁছে দেবার কাজে অংশ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :