শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৪৫ রাত
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ০৩:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিজিটাল আইন আছে, থাকবে

আনিসুর রহমান তপন : সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন কর্মসূচির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল আইন কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নয়। এটা মিথ্য তথ্যের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে যারা অপপ্রচার চালাবে তাদের বিরুদ্ধে এই আইন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনটি কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য করা হয়নি। বরং যারা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, যারা শিশুদের বিনষ্ট করবে, ভুল প্ররোচনা দিয়ে উস্কানি দিবে তাদের বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থানে থাকবে তা জানাতেই এই আইন করেছে সরকার। মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে এ তথ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনার প্রথমেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছ থেকে তাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। সবাই চুপ থাকলেও তথ্য, আইন ও সেতুমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সম্পাদক পরিষদকে জানানো হয়েছিল, মন্ত্রিসভায় আইনটি নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের কথা কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বলে দিবেন আলোচনা হয়েছে। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্ত্রিসভাকে জানান, এটা তো পাস হয়ে গেছে। আলোচনার কিছু নেই।

আলোচনার এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যে ডিজিটাল আইনের এত বিরোধিতা করছেন, এটা তো তাদের বিরুদ্ধে নয়। বরং তারাই আমার বিরুদ্ধে। আমার সরকারের বিরুদ্ধে। একজন সম্পাদক এর আগে স্বীকার করলো যে, আমার বিরুদ্ধে ডিজিএফআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী তড়িঘড়ি করে সংবাদ প্রকাশ করে সে ভুল করেছে। এজন্য কি সে পদত্যাগ করেছে? তার বিরুদ্ধে কি সম্পাদক পরিষদ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? সে তো সব সময় আমার বিরুদ্ধে লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে।

এমনকি পদ্মাসেতুর অর্থায়ন যাতে না হয়, সে জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংকে গিয়ে কথা বলেছিলেন। এমনকি তার বুদ্ধিতেই আমাকে ১/১১ এর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। এই সম্পাদককে নাটের গুরু হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সব কিছু করছে। এই সম্পাদক ভাল কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ করছে সেটা আপনাদের বুঝতে সময় লাগলেও আমার লাগেনি। আসলে তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, নির্বাচনের আগে যা খুশী তাই লিখে বিব্রত করবে। আর সরকার যতে তাদের ছুঁতে না পারে।

ক্ষোভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সাংবাদিক কেন মনে করছে তার হাতে অনেক ক্ষমতা। সে যা খুশী তাই করতে পারবে। আমার যে ড্যামেজ আপনি করেছেন আগে তা পূরণ করেন। তা না করে পরিষদ পরিষদ করছেন। এরাই প্রধানমন্ত্রী/মন্ত্রিপরিষদের বিরুদ্ধে লিখেছেন। তো মন্ত্রীদের পরিবারের কি কোনো মান-সম্মান নেই। তারা লিখলো, সারা দুনিয়া জানলো।

এই যে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে হয়েছে বলে মিথ্যা সব খবর প্রকাশ হয়েছে। তাতে কানাডার আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। সেখানে তো কিছু প্রমান হয়নি। অথচ এই ঘটনায় একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। একজন সচিব এক বছর জেল খাটলেন। এতে যে তাদের ক্ষতি হয়েছে তার কি হবে। তাদের ক্ষতিপুরণ কি এই সম্পাদক পরিষদ করতে পারবে।

আমি সংবাদ পত্রের বিরুদ্ধে কোনো আইন করি নাই। অনুসন্ধানীসহ সব সাংবাদিকতা থাকবে কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকার, দেশ, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা একটা প্রযন্মকে নষ্ট করার জন্য যদি মিথ্য তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করে তার বিরুদ্ধে এই আইন কার্যকর হবে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধেসহ সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে। নির্ভয়ে করতে পারবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, যা নয়, তা করতে পারবে না। আর তার জন্য একটার পর একটা আবদার করছে তারা। আবদার কেন? তাদের নিশ্চই নতুন কোনো এজে-া আছে। নির্বাচনের আগে যা খুশী তাই ছাপিয়ে দিবে। আর নির্বাচনে আমরা পরাজিত হলে আর সম্পাদকদের আর পায় কে? কে তাদের বিচার করবে। তাই আমরা তাদের যা খুশী তাই করার লাইসেন্স দিব কেন?

সাংবাদিকরা যে কোনো সত্য খবর প্রকাশ করুক। সেটা সরকার বা আমার বিরুদ্ধে হলেও তাতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়, তবেই তারা আইনের আওতায় আসবে।

ডিজিটাল আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের এত কনসার্নটা কেন? এমন প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সাংবাদিকরা অন্যায় করবে না, তাদের কোনো ভয় নেই।

সম্পাদক পরিষদের বর্তমান কর্মকা-ের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে আমার পরিবার নিয়ে যে সমস্ত মিথ্যচার হয়েছে, তার জন্য সম্পাদক পরিষদ কি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? অথচ এসব মিথ্য প্রচার তা প্রমাণ করতে আমার কয়েক বছর লেগে গেছে। আমি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় না আসলে তো তারা এই মিথ্যাচারকেই সত্য বলে প্রচার করে দিত।

তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে সম্পাদক পরিষদকে পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা একটা প্রশ্নের জবাব দিক, কোন কোন ভাল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কি কি মামলা হয়েছে আজ পর্যন্ত। ডিজিটাল হউক বা অন্য কোনো মামলায় হউক তারা আমাকে দেখাক কোন কোন ভাল সাংবাদিক অন্যায় ভাবে মামলার শিকার হয়েছে। তারা কেন মনে করছে ডিজিটাল আইনে তাদের স্বাধীনতা থাকবে না।

সাংবাদিক নয় এমন কোনো মানুষ যদি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে প্রযুািক্তর সহায়তায় জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয় বা অপপ্রচার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই আইন। যারাই অন্যায়কে উস্কানি দিবে, সত্যকে বিকৃত করবে, মানুষের চরিত্র হনন করবে, তথ্য প্রমান ছাড়া ঢালাও ভাবে মিথ্য প্রচার করবে তাদের বিরুদ্ধে এই আইন। কোনো তথ্য প্রচার করার পর যদি তা প্রমান দিতে না পারে তবেই এটা কার্যকর হবে।

এসময় সরকার সমর্থক কয়েক জন সম্পাদকের বিষয়েও আলোচনা হয় মন্ত্রিসভায়। এ ব্ষিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সরকারের সুবিধা নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। তারাও আছে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, এই সম্পাদকদের পত্রিকাকে কি কি সুবিধা দেয়া হয়েছে তা খুঁজে বের করুন। আগামীতে যাতে ঢালাওভাবে তাদের আর সুযোগ দেয়া না হয় সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়