শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ০২:০৬ রাত
আপডেট : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ০২:০৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিয়ে ও পরকীয়া

বিভুরঞ্জন সরকার : ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' নামে একটি রাজনৈতিক জোটের যাত্রা শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই ঐক্য গঠন নিয়ে নানামুখী তৎপরতা আমরা লক্ষ্য করে আসছি । বিকল্প ধারার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ-প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের গণমাধ্যমগুলোর অনেক বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। বি চৌধুরী এবং কামাল হোসেন এক হয়ে ডাক দিলেই দেশের জনগণ মৌমাছির মতো একত্রে জড়ো হয়ে চাক বাঁধবে বলে মনে করা হয়েছিলো। দফায় দফায় আলোচনা, বৈঠক, সমাবেশ ও হাতে হাত ধরে শপথ নিয়ে শেষ পর্যন্ত যে বৃহত্তর ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হলো, তাতে ডা. বি চৌধুরী নেই। একদিকে মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের জন্মবার্তা ঘোষণা করছেন; অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে কোনো ঐক্য করবে না বিকল্প ধারা।

যার হাতে বিএনপির জন্ম, যিনি এক সময় বিএনপির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন; সেই ডা. বি চৌধুরী বলছেন, জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ দিবেন না তিনি। এখন প্রশ্ন হলো, এতদিন ধরে তাহলে ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে বৈঠকাদিতে বিকল্প ধারা উপস্থিত থেকেছে কেন? ডা. চৌধুরী কি ভেবেছিলেন, বিএনপিকে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করার জন্য?
ডা. চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় ঐক্য করতে হলে প্রথম শর্ত হলো, স্বাধীনতাবিরোধীদের ত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ও রাজনীতিতে ভারসাম্য আনার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

বিকল্প ধারা যেহেতু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যায়নি, সেহেতু আমরা ধরে নিতে পারি যে, দুই শর্ত পূরণ হয়নি।
ড. কামাল হোসেনও বলে আসছিলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে বৃহত্তর ঐক্য তিনি থাকবেন না। কিন্তু জামায়াত ছাড়ার স্পষ্ট ঘোষণা বিএনপি না দিলেও কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একজন সামান্য কর্মী হিসেবে স্বৈরাচারী শক্তির কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা পেয়েছি। তাই কোনো হুমকিকে ভয় করি না। চাইলে আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। ট্যাংক, গুলি নিয়ে আসতে পারেন; ঐক্যবদ্ধ জনগণের শক্তিকে প্রতিহত করা যাবে না।’ কামাল হোসেনের মতো একজন বিজ্ঞ ও ‘আন্তর্জাতিক’ খ্যাতিসম্পন্ন মানুষের কাছে এমন মেঠো বক্তৃতা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কামাল হোসেন নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর একজন সামান্য কর্মী হিসেবে’ দাবি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কর্মী বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করলেন কোন কোন বিবেচনা থেকে? বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিএনপির মূল্যায়ন কী? ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান কী? কামাল হোসেন সাহেব যখন বিএনপির মঞ্চে ভাষণ দেবেন, তখন কি বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবেন? একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর গুণকীর্তন করবেন, আর বিএনপির মহাসচিব বা অন্য কেউ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে গলাবাজি করবেন; তখন বিষয়টি উপভোগ্যই হবে! এটাকেই জাতীয় ঐক্যের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করা হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে কামাল হোসেন ‘স্বৈরাচারের’ কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা পাওয়ার কথা বলে কী বোঝাতে চেয়েছেন? মাথানত করার প্রমাণ কিন্তু তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে রেখেছেন। তিনি হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচারী মনে করেন। করতেই পারেন। তিনি যেহেতু এখন আর আওয়ামী লীগ করেন না, তাই আওয়ামী লীগ আর গণতান্ত্রিক দল থাকে কী করে? তবে যে বড় দলের সঙ্গে ঐক্য করলেন সেই দলটি কি গণতান্ত্রিক? খালেদা জিয়ার শাসনামল কি খুব গণতান্ত্রিক ছিলো? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি কি গণতান্ত্রিক ছিল? বিএনপির মতো একটি স্বেচ্ছাচারী দলের সঙ্গে ঐক্য করে কামাল হোসেন তার রাজনৈতিক সততা বিসর্জন দিয়েছেন এবং শেখ হাসিনার প্রতি তার যে বিদ্বিষ্ট মনোভাব, তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

যে সব ব্যক্তি, দল ও দলাংশ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলো তারা কি জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করার নৈতিক অধিকার রাখেন? বিএনপি ছাড়া আর কোনো দল কি ঐকফ্রন্টে আছে, যাদের নির্বাচনী এলাকা এবং জয়লাভের সম্ভাবনা আছে? ধানের শীষ মার্কা ধার নিয়ে নির্বাচন করে রাজনীতিতে নীতিবাক্য শোনালে সেটা শুনতে খুব ভালো লাগবে কি?

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বক্তব্য এবং অবস্থান বরং কামাল হোসেনের চেয়ে স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ। তিনি বলেছেন, ‘এক স্বৈরাচারকে বিদায় করে আরেক স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আনা যাবে না। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।’ দুই দলকে একপাল্লায় মেপে তিনি ঠিক করেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু দুই বড়ো দল থেকে সমদূরত্বের নীতি নিয়ে এক ধরনের নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন এই অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন কি না, দেখার বিষয় সেটিই।

সবচেয়ে মজার কথা বলেছেন, বিকল্প ধারার নেতা মাহী বি চৌধুরী। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করায় বিএনপির সমালোচনা করে মাহী বলেছেন, বিএনপি এখানে জাতীয় ঐক্য করে আর ২০-দলীয় জোটে জামায়াতের সঙ্গে পরকীয়া করে। অন্যদিকে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব আর নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার বিয়ে হচ্ছে এখানে, যুক্তফ্রন্টে। আর তাদের পরকীয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে।’

মাহীর বক্তব্য কৌতুকপ্রদ, তবে ফেলে দেয়ার মতো নয়। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নামে যে নাটকীয়তা ও তামাশা হচ্ছে; তা দেখে একটি প্রবাদ মনে পড়ছে, ‘ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর।’ ঠেলাঠেলির ঐক্যের পরিণতি দেখার জন্য আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়