সমকাল: আমেরিকায় বিভিন্ন গাছের জন্য ভয়ঙ্কর পোকা ফল আর্মিওয়ার্ম বাংলাদেশেও আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। সারা বিশ্বে ফল আর্মিওয়ার্ম উদ্ভিদ বিধ্বংসী পোকা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন দেশে এ পোকা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই পোকার আক্রমণে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ফসলহানি, এমনকি দুর্ভিক্ষেরও সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. সৈয়দ নূরুল আলম জানান, আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি ভারতের কর্নাটক এবং তামিলনাড়ূ রাজ্যে এ পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। এটা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে যেহেতু পাশের দেশে এর আক্রমণ শুরু হয়েছে সুতরাং যে কোনো সময় পোকাটি এ দেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থাতেই পোকাটির অবস্থান শনাক্ত করা না গেলে দেশে ব্যাপক ফসলহানি, বিশেষ করে ভুট্টা ফসলের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, ফল আর্মিওয়ার্ম মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৬ সালে এটির প্রথম আক্রমণ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যায়। পরের বছর প্রথম দিকেই ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপক ফসলহানি করে, এমনকি দুর্ভিক্ষেরও সৃষ্টি হয়।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভুট্টা, তুলা, বাদাম, তামাক, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ প্রায় ৮০টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে ফল আর্মিওয়ার্ম। তবে ভুট্টা ফসলে এর আক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। পোকাটি কিড়া অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে। কিড়ার প্রাথমিক অবস্থায় এদের খাদ্য চাহিদা অনেক কম থাকে, তবে শেষ ধাপগুলোতে খাদ্য চাহিদা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পায়। সে কারণে কিড়ার ৪-৬ ধাপগুলো অর্থাৎ কিড়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগে রাক্ষুসে হয়ে ওঠে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এমনকি এক রাতের মধ্যে এরা সব ফসল নষ্ট করে ফেলতে পারে। পোকাটি সঙ্গনিরোধ বালাই হিসেবে পরিচিত এবং ডিম ও পুত্তুলি অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদান যেমন- বীজ, চারা, কলম, কন্দ, চারা সংলগ্ন মাটি ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তারলাভ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ পোকা অনেকদূর পর্যন্ত উড়তে পারে। এমনকি ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে কয়েকশ' কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, পোকাটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা এবং সরাসরি পোকা খাওয়ার লক্ষণ দেখে বা কিড়া শনাক্ত করে এ পোকার আক্রমণ চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের আমদানি করা বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদানে পোকাটির বিভিন্ন পর্যায়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের মাঠ পর্যায়ে ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ফল আর্মিওয়ার্মের ফেরোমন ফাঁদে পোকা পাওয়া গেলে বা লক্ষণ অনুযায়ী কোনো ফসলে বিশেষ করে ভুট্টায় পোকার আক্রমণ দেখা গেলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জরুরি ভিত্তিতে অবহিত করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :