সাব্বির আহমেদ : প্রায় এক বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভা করেছে বিএনপি। তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় পুলিশি বাধা ও হয়রানির অভিযোগ করেছে দলটি। সভাস্থলে আসতে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
রোববারের দলীয় জনসভায় অংশ নিতে সকালে রওনা দেন আবদুর রাজ্জাক। ধামরাই থেকে আসা যুবলদলের এই নেতা জানান, যাত্রার শুরুতেই ধামরাইয়ে গাড়ি আটকিয়ে দেওয়া হয়। আমরা দলবদ্ধভাবে আসছিলাম। পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে দেওয়ার পর আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। পরে একাধিক গাড়ি পাল্টিয়ে সমাবেশে আসি।
গাজীপুর থেকে সমাবেশে এসেছেন বিএনপি নেতা বাবুল হোসেন। তার অভিযোগ, আসার পথে আব্দুল্লাহপুরে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। এমনভাবে রাজধানীর প্রবেশপথের প্রায় সড়কে যানবাহন থামিয়ে দেয়া হয়।
বিপুল জনসমাগমের ওই জনসভায় আসা অনেক নেতাকর্মীরা এমন নানা অভিযোগ করেছেন।
এর আগে কারাবন্দি দলের চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দুপুর ২টায়। কিন্তু দুপুর ১২টার পরই অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যায় জনসভা। বেলা ১০টার পরপরই আসছে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।নেতাকর্মীরা বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন। ঘণ্টাখানেক পরই উদ্যান লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। দুপুর ১টার আগেই জনসভাস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
বিএনপি ও দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা উদ্যান। রাজধানীর নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকা, বাংলামটর, শাহবাগ, মৎভবন, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিলে মিছিলে উদ্যানে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে যেসব নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে আসেন, তারা সকাল থেকেই শাহবাগ, মৎসভবনের আশেপাশের অলিতে গলিতে অবস্থান নেন।
নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাব লক্ষ করা যায়। জনাকীর্ণ সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে পাশ্ববর্তী শাহবাগ ও মৎসভবন পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
'আমার নেত্রী অামার মা, বন্দী থাকতে দেবো না’, ‘আমার মা জেলে কেন’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘বন্দি আছে আমার মা, ঘরে ফিরে যাবো না’, ‘হামলা করে আন্দোলন- বন্ধ করা যাবে না’- ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সমাবেশের প্রবেশ মুখে সকাল থেকেই অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ছিল র্যাবের টহল। প্রস্তুত ছিল সাজোয়া যান, জলকামান। রাজধানীর মৎসভবন, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট চত্বর মোড় ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ পোশাকে, সিভিল ড্রেসে ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। এর বাইরেও রাজধানীর কাকরাইল মোড়, হোটেল রূপসী বাংলা মোড়, কাটাবন, পল্টন, বিজয়নগর এলাকাতেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের কেউ গাড়িতে হাত দেওয়া, রাস্তা বন্ধ করা, পুলিশের গায়ে হাত দেওয়াসহ কোনও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে তাদের দমন করতে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে। আর তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে চলে গেলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের কিছুই করবে না। সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে মাঠে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরতে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে ছিল।’
আপনার মতামত লিখুন :