জাকির আকন, চলনবিল: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার চলনবিল এলাকায় ইতিহাস খ্যাত কিংবদন্তীর নায়িকা বেহুলার বাবা বাছু বানিয়ার বিড়ান বাড়ি ভিটার স্মৃতি চিহ্ন, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে অযত্নে ও অবহেলায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে । বিড়ান ভিটায় স্মৃতি চিহ্ন জীয়ন কূপটি এখন কেবল সংরক্ষিত। একটি কুপের মধ্যে চারটি মূখের কুপের আকর্ষনীয় জীয়ন কুপটিসহ বেহুলা পিতৃ ভিটা দেখতে দূর-দূরান্তের পর্যটকরা এখনও আসেন । তবে বেহুলার বাবা বাছু বানিয়ার চলনবিলের বারুহাঁস ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বিনসাড়া গ্রামের ৫২ বিঘা আয়তনের সেই ইতিহাস খ্যাত বাড়িটির চিহৃ নেই বললেই চলে। ফলে ইতিহাস থেকে বাড়িটির স্মৃতি চিহ্ন বিলীন হতে চলছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর লোক কাহিনীতে বেহুলার বাবা বাছু বানিয়ার বাড়িটিতেই জন্ম নেয় বেহুলা সুন্দরী। সতী নারীর প্রতীক হিসেবে অনিন্দ্য সুন্দরী বেহুলার রুপ ও গুনের অনেক কাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবীণ ব্যাক্তিরা বংশ পরম্পরায় শুনে এখনো গল্পচ্ছলে নাতি-নাতনীদের বলে থাকেন। এই বেহুলা সুন্দরিকেই নিয়েই নির্মিত হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র । বগুড়া জেলার করতোয়া নদীটি চলনবিলের মধ্যে প্রবাহিত হওয়ার সময় সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বিনসারা গ্রামের মাঝখানে প্রবাহিত হয় । বিনসারা গ্রামের মধ্যে প্রবাহিত করতোয়া নদী ( বর্তমানে খাল ) কে এলাকাবাসী বেহুলার খাড়ি বা খাল বলে থাকেন । বিনসারা গ্রামের পার্শ্বে বসতুল গ্রামের যে বট বৃক্ষের নিছে বেহুলা সুন্দুরির সাথে চাঁদ সওদাগারের পুত্র লক্ষীক্ষনদরের সাক্ষাত হয়েছিল সেই জায়গাটি এলাকাবাসীর নিকট চাঁদের হাট নামে খ্যাতি লাভ করেছে ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া গ্রামে বেহুলার পিতৃ ভিটায় জীয়নকূপ এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র। ওই গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা সাঈদুর রহমান সাজু জানান, তিনি ছোটবেলায় বিনসাড়া গ্রামে বেহুলার বাড়ীর স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে সে সময়কার পুরাতন ইট, সুড়কী , ভগ্ন প্রাচীর, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট, ডুবন্ত নৌকার স্মৃতি চিহৃ দেখেছেন। বর্তমানে সেখানেই কিনা হয়েছে বিনসাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , উচ্চ বিদ্যালয় ভবন এবং অনেকেই বাড়ি ঘর করে তুলে বসত করছেন ।
বেহুলার জীয়ন কূপ, তার স্নান করার মল পুকুর, ডুবন্ত নৌকার চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই বেহুলার বাবার বাড়িতে। তবে আশেপাশের লোকজন এখনো বিনসাড়া গ্রামের বেহুলার পিতৃ ভিটার ওই পাড়াটিকে ‘‘ বেহুলার পাড়া ’’ হিসেবে জানেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ফেরদৌস ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে সরকারি অনুদান নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঐতিহাসিক বেহুলার পিতৃ ভিটার অবশিষ্ট থাকা স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার উদ্দ্যোগ নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :