নূরুল আনোয়ার : রোহিঙ্গা সমস্যা সাম্প্রতিক বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে টর্নেডো গতিতে তাদের আগমন ঘটেছে। এতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ ঘটনার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে বহুদিন আগে থেকেই। উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশহীন মানুষ বলে পরিচিত রোহিঙ্গা জাতি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন পূর্ব নাম আরাকান প্রদেশের অধিবাসী। ঐতিহাসিক তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী থেকে বর্তমান রোহিঙ্গাদের পূর্ব পুরুষের বসবাস আরাকানে। এ সময় থেকে বার্মার আরাকান দখলের পূর্ব পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের প্রতিবেশী রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে আসছিল। আরাকানের রাজপ্রাসাদে বৌদ্ধধর্ম ও ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যের বন্ধন ছিল।
সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এক সময় আরাকানের রাজধানী ¤্রাউকও ছিল একটি কসমোপলিটন শহর এবং একে ভেনিসের সঙ্গে তুলনা করা হতো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বাংলাদেশকে এ কথা তুলে ধরতে হবে যে, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত এবং টেকসই সমাধান নিশ্চিত না করা গেলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে কোনো চরমপন্থার দিকে ধাবিত হতে পারে। আর সেটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার আগেই দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখতে হবে।
তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা পালন অনেকটাই বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ জাতীয় ঐক্য গঠনেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান না করা গেলে বাংলাদেশের জন্য তা দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক সমস্যার কারণ হবে। সরকার এ সত্য উপলব্ধি করে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। ভূমিকা নিতে রাশিয়া, চীন ও ভারতের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোরালো ভূমিকা পালন করতে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের মতো দেশগুলো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।
ইউএনএসসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো অ্যাডোলফো মেজা কুয়াদ্রা বেলাসকেজ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ১৫ সদস্যের ইউএনএসসির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে ঢাকা ও নাইপিদোর মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারের কাজ করা উচিত। এছাড়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর প্রবল চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান। আমরা সংঘাত চাই না, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।
পরিচিতি : সাবেক আইজিপি/মতামত গ্রহণ : নৌশিন আহম্মেদ মনিরা/সম্পাদনা : ফাহিম আহমাদ বিজয়
আপনার মতামত লিখুন :