রাজু আনোয়ার : গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন আধুৃনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। দিনের প্রায় ২৪ ঘন্টাই বিছানায় বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকেন তিনি। শোয়া থেকে উঠার শক্তি নেই তার। ওষুধ মুখে দিলেও গলাদ:করনের অবস্থা নেই এখন তার। অনেক ডাকাডাকির পর চোখ মেলে হঠাৎ একটু সাড়া দিলেও জবাব দেবার মত অবস্থা একেবারেই নেই বললে চলে।
কবির নিয়মিত চিকিৎসক ইবনে সিনা হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডাক্তার আবদুল হাই জানিয়েছেন, বার্ধ্যক্যজনিত কারণে কবি আল মাহমুদের এ অসুস্থতা। এছাড়া বড় ধরনের কোন শারীরিক সমস্যা নেই । কবির উন্নত চিকিৎসার জন্যও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে হাসপাতালের পরিবেশে চিকিৎসাধীন না রেখে নিজ বাসভবনে কবির যত্ন তদারকি করতেই বেশি আগ্রহী কবি পরিবার। এ পরিস্থিতিতে তারা কবির জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন।
একাধারে ওপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, লেখক এবং সাংবাদিক আল মাহমুদের সবচেয়ে বড় পরিচয় কবি। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আল মাহমুদের সাংবাদিকতার হাতেখড়ি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার মধ্য দিয়ে। অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকন্ঠের সম্পাদক বিংশ শতাব্দীর সক্রিয় এ আধুনিক কবি বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, ভাষা ও বাকভঙ্গীতে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ আল মাহমুদকে স্বনামখ্যাত কবিদের কাতারে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ‘কালের কলস’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে উঠো’ ‘সোনলি কাবিন’ তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবন প্রবাহ , নরনারীর চিরন্তন প্রেম এই রোমান্টিক কবির কবিতার অনুষঙ্গে হিসেবে ধরা দেয়। আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের প্রয়োগ কবির অনন্য কীর্তি।
১৯৭৫ সালে কবি আল মাহমুদকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘদিন দায়িত্বপালনের পর পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন তিনি।
সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম ‘সোনালি কাবিন’ এর কবি আল মাহমুদ ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জয়বাংলা পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরষ্কার, সুফী মোতাহের হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক এবং ২১ পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন।
আপনার মতামত লিখুন :