সোহেল রানা, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: কমলগঞ্জের কামদপুরে স্ত্রীর মর্যাদায় ঘরে তোলার দাবিতে প্রেমিক সেজু চৌধুরীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে রাজনা বেগম নামে এক প্রেমিকা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষের বোতল নিয়ে কথিত প্রেমিক সেজুর বাড়িতে উঠে স্থানীয় ওমান প্রবাসী আনোয়ার খা এর স্ত্রী এক সন্তানের জননী রাজনা।
এ সময় পুত্রবধুর মর্যাদা দিয়ে তাকে ঘরে তুলার জন্য সেজুর পরিবারের কাছে দাবী জানায়। অন্যতায় সে বিষপানে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। এ সময় রাজনার হাতে থাকা বিষের বোতল কেড়ে নেন সেজুর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় প্রেমিক সেজুর বাড়িতে চাপা উত্তেজনা দেখা দিলে মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রেমিক যুগলকে পুলিশী হেফাজতে নেয় কমলগঞ্জ থানা পুলিশ।
স্থানীয়রা জানায়, কমলগঞ্জের জালালপুর (বিলেরপাড়) গ্রামের আব্দুল আলীমের কন্যা রাজনা বেগমকে ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ বিয়ে করেন কামদপুর গ্রামের আব্বাস খা এর পুত্র ওমান প্রবাসী আনোয়ার খা। তাদের সংসারে মাহাতি নামে এক সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক মাস পর আনোয়ার প্রবাসে চলে গেলে তার বাড়িতে নিয়মিত আসা যাওয়া করতো স্থানীয় ব্যবসায়ী সেজু চৌধুরী।
রাজনার অভিযোগ, তার স্বামীর কনিষ্ঠ বন্ধু প্রতিবেশে সেজু নিয়মিত তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাদে সেজুর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় পরকীয়ায়। বিয়ের প্রলোভনে তার সাথে নিয়মিত মেলামেশা করতে থাকে সেজু। এক সময় তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে ইসলামী শরিয়াত মোতাবেক গোপনে তাকে বিয়ে করে সেজু।
তাদের বিয়ে পড়ান স্থানীয় মাওলানা হারুন। প্রথম স্বামী আনোয়ারকে তালাক না দিয়ে কথিত প্রেমিক সেজুকে গোপনে বিয়ে করার বিষয়টি অজানাই ছিল সেজু ও আনোয়ারের পরিবারের। গোপনে তারা বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে তারা সহবাস করছিল। কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাকে ঘরে না তুলায় তাদের পরকিয়ার প্রেম কাহিনা এলাকায় রটে যায়।
এ নিয়ে সম্প্রতি কয়েক দফা সালিশ বৈঠক হলেও কোন সমাদান আসেনি। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর মর্যাদায় ঘরে তোলার দাবীতে বিষের বোতল নিয়ে সেজুর বাড়িতে উঠে রাজনা। এ সময় পুত্রবধুর মর্যাদায় তাকে ঘরে তোলার দাবী জানায়। অন্যতায় আত্মহত্যার হুমকি দেয়। খবর পেয়ে কথিত প্রেমিক সেজু বাড়িতে ছুটে এসে রাজনার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এতে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয় বাড়িতে।
খবর পেয়ে রাতে স্থানীয় সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কমলগঞ্জ থানার এসআই চম্পক দাম ও এএসআই হামিদ এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে প্রেমিক যুগলকে পুলিশী হেফাজতে থানায় নিয়ে আসেন।
রাজনা বেগমের দাবি, বিয়ে করে দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে তার সাথে মেলামেশা করছে। তাকে ঘরে তোলার কথা বললে আজকাল ঘরে তুলবে বলে জানালেও তাকে ঘরে তুলে নিচ্ছে না। তার সাথে প্রতারনা করছে। সেজুর প্রেমে পড়ে সে স্বামী সন্তান ও পরিবার হারিয়েছে। এখন মরণ ছাড়া তার আর কিছু নেই।
তবে সেজুর পরিবার জানায়, তারা বিষয়টি আগে জানতেন না। হঠাৎ করেই মঙ্গলবারে মেয়েটি বিষের বোতল নিয়ে বাড়িতে আসলে আমরা তাকে অনেক বুঝালাম যে, তোমার সন্তান ও সংসার আছে। কিন্তু গত ইউপি নির্বাচনের জেরে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও স্থানীয় প্রভাবশালী এক প্রবাসীর প্ররোচনায় সে কিছুই বুঝতে চায় না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছেলে মেয়ে দুজনকে পুলিশী হেফাজতে আনা হয়েছে। এখন উভয় পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের মধ্যস্থতায় বুধবার দুপুরে আপোষ মিমাংশার উদ্যোগ নিয়েছেন। সমাদান না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বুধবার বিকালে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, উভয় পরিবারের অভিভাবকদের নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৈঠকে বসলেও বিষয়টির কোন সুরাহ হয়নি। মেয়ে ছেলে দুজনই পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। মেয়েটি কোন অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :