শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ময়মনসিংহে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে রাফিয়ার মৃত্যু নিয়ে সালিশ

মাহমুদুল হাসান রতন : ময়মনসিংহে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে রাফিয়ার মৃত্যু নিয়ে সালিশ, দায়ী চিকিৎসকের প্রাকটিস বন্ধ। ময়মনসিংহ শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ‘শিলাঙ্গণ’ কর্তৃপক্ষ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন ভূইয়ার অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় প্রগ্রেসিভ মডেল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী রাফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সামাজিক সালিশ।

সালিশে স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘শিলাঙ্গণ’ এক মাস এবং ডা. মনির হোসেন ভূইয়ার তিন মাস প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার রাতে শহরের চরপাড়া এলাকার পারমিতা চক্ষু ক্লিনিকে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, আওয়ামী লীগ ও চিকিৎসক নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সালিশে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন ‘সুচিকিৎসার জন্য সংগ্রাম’ সংগঠনের আহ্বায়ক আলী ইউসুফ ও যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আশরাফসহ রাফিয়ার বাবা মাহমুদ বাবু। এদিকে গাইনি চিকিৎসক ডা. শীলা সেনের বেসরকারি হাসপাতাল ‘শিলাঙ্গণ’ বন্ধ থাকায় এবং ডা. মনির হোসেন ভূইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ায় শহরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্বস্তির ঝড় বইছে।

ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সালিশে সাব্যস্ত শাস্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু জানান, ‘সুচিকিৎসার জন্য সংগ্রাম’ সংগঠনের নেতারা ওই চিকিৎসকের ৩ বছর প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধসহ নানা দাবি তুলেন। তবে ডা. মনির হোসেন ভূইয়া তার গাফিলতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সর্বসম্মতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়।

এ ব্যাপারে সালিশে উপস্থিত বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া ও ময়মনসিংহ প্রাইভেট ক্লিনিক প্রাকটিশনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. হরিশংকর দাসও চিকিৎসকের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে সমঝোতা হয়েছে বলে জানান।জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালিশে বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া, মহাসচিব ডা. তারা গোলন্দাজ, ময়মনসিংহ প্রাইভেট ক্লিনিক প্রাকটিশনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. হরিশংকর দাস, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট পিযুষ কান্তি, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম, শাহীন রাকিব, শওকত জাহান মুকুল, শিলাঙ্গন হাসপাতালের মালিক ডা. শীলা সেন, অভিযুক্ত ডা. মনির হোসেন ভূইয়া, রাফিয়ার বাবা মাহমুদ বাবুসহ সুশীল সমাজের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য গত ২৬ আগস্ট শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কথাশিল্পী মাহমুদ বাবুর শিশুকন্যা রাফিয়ার তলপেটে ব্যথা হলে গাইনি চিকিৎসক ডা. শিলা সেনের কাছে নিয়ে যান রাফিয়ার বাবা মাহমুদ বাবু।

সন্ধ্যায় রাফিয়াকে ডা. শিলা তার ব্যক্তিগত ক্লিনিক শিলাঙ্গনে ভর্তির জন্য নির্দেশ দেন তিনি। সেখানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন ভূইয়ার নির্দেশে দুই দিনব্যাপী রাফিয়ার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২৮ আগস্ট রাফিয়ার এপেন্ডিসাইডসের রোগ ধরা পড়ে বলে ভোর ৬টায় তার অপারেশন হয়।

অপারেশনের পর রাফিয়ার অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক তাকে পাশের একটি ক্লিনিকে আইসিইউতে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পর মৃত ঘোষণা করা হয় শিশু রাফিয়াকে।
শিলাঙ্গণ কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের অবহেলায় মেধাবী ছাত্রী রাফিয়ার মৃত্যু হয় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

স্বজনদের অভিযোগ, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অতিরিক্ত পয়সা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশেই শিশু রাফিয়ার সুচিকিৎসায় কালক্ষেপণ করা হয়েছে। যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠে শহরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। গঠিত হয় ‘সুচিকিৎসার জন্য সংগ্রাম’ সংগঠনের ব্যানারে নানা আন্দোলন।

এসব অভিযোগে ওই ক্লিনিক স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য একাধিকবার বৈঠক শেষে অবশেষে শাস্তি নিশ্চিত হলো ওই চিকিৎসকের। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রাফিয়ার স্বজন এবং আন্দোলনকারীরা।বিশিষ্টজনদের মতে, ওই চিকিৎসক ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় শহরবাসী এখন কিছুটা হলেও সুচিকিৎসা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়